বাসস
  ০৮ মে ২০২৫, ১৮:০৩

রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে শাহজাদপুরে তিন দিনব্যাপী জন্মোৎসব শুরু

ছবি : সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ, ৮ মে ২০২৫ (বাসস) : আজ ২৫শে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে কবির স্মৃতিধন্য শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে তিন দিনব্যাপী এক জন্মোৎসব আজ শুরু হয়েছে। 

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি বছরের মতো এবারও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন এ জন্মোৎসবের আয়োজন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আজ সকালে তিন দিনের এই অনুষ্ঠানমালা ও আলোচনা সভার উদ্বোধন করেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার  মো. ফারুক  হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নিসা। আলোচনায় অংশ নেন সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাফাত আলম।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব মো. আব্দুল খালেক বলেন, 'আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৈতৃক জমিদারি দেখাশোনার জন্য শাহজাদপুরে এসে ভালোবেসে ফেলেছিলেন শাহজাদপুরের মাটি ও মানুষকে। এ অঞ্চলের মানুষের সাথে তাঁর ছিল আত্মার সম্পর্ক। সোনার তরী, পোষ্টমাষ্টারসহ অসংখ্য দুর্লভ সাহিত্য তিনি এখানে বসেই তিনি রচনা করেছেন, যা বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব-দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এখনও  বেঁচে রয়েছেন, থাকবেন তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে! '

তিন দিনব্যাপী অন্যান্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে আজ বিকেল তিনটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামীকাল দ্বিতীয় দিন দিনব্যাপী এবং তৃতীয় দিন শনিবার সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  

এ উপলক্ষে রবি কবির স্মৃতিধন্য শাহজাদপুরের কাছারি বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা রঙিন সাজে সাজানো হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটক ও রবীন্দ্র অনুরাগীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণ। 

ইতিহাস পাঠে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাছারি বাড়ি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারি একদা নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তেরো টাকা দশ আনায় এই জমিদারি কিনে নেন। জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে ওই কাছারি বাড়িও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয় বলে ধারণা করা হয়। তার আগে কাছারি বাড়ির মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি  দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে সাময়িকভাবে আসা-যাওয়া ও বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। এ কারণেই শিলাইদহে তাঁর বাসগৃহ কুঠিবাড়ি নামে এবং শাহজাদপুরের বাড়িটি কাছারি বাড়ি নামে পরিচিত বলে ধারণা করা হয়। 

কবি শাহজাদপুরে পালকিতে, নৌকায় ও পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শাহজাদপুর পৌর এলাকার প্রাণকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের দক্ষিণ পাশে এক সবুজ শ্যামল পরিবেশে কবিগুরুর কাছারিবাড়ি। কাছারি বাড়িটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার, প্রস্থ ১০.২০ মিটার এবং উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। ভবনটির দোতলার সিঁড়ি ছাড়াও মোট সাতটি কক্ষ রয়েছে। ভবনটির উত্তর দক্ষিণে একই মাপের প্রশস্ত বারান্দা, বারান্দায় গোলাকৃতির জোড়া খাম ও উপরাংশে আছে অলংকরণ করা বড় দরজা। জানালা ও ছাদের ওপরে প্যারাপেট দেয়ালে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম ও রুচির নান্দনিক উপস্থাপনা পর্যটক ও ভক্তদের দৃষ্টি কাড়ে। 

এখানে এসে মানুষ ও প্রকৃতিকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন কবিগুরু। শাহজাদপুরেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন সাহিত্য সৃষ্টির দুর্লভ উপাদান। বিচিত্র ফুল সমাহারে ঘেরা কবিগুরুর অপরূপ কাছারি বাড়িটি বহুদূরের পথিকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কাছারি বাড়ির চারদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের আশপাশে রয়েছে নানা দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষের বাগান। কাছারি বাড়ির ভেতরে একটি বকুলগাছ ছিল। কবি ওই গাছের নিচে বসে কবিতা লিখতেন। 

১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় কাছারিবাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর কাছারিবাড়ির মূল ভবনটির সংস্কার করে ভবনটিতে রবীন্দ্রভিত্তিক আলোকচিত্র ও কবিগুরুর ব্যবহৃত নানা আসবাবপত্র তৈজসপত্র ও সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়। গড়ে তোলা হয় একটি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর। 

নিচতলা ও দোতলার বিশাল হলরুমসহ জাদুঘরের সকল কক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সর্বসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত। কবির ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী দিনেই অসংখ্য রবীন্দ্র অনুরাগী ও ভক্তের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কাছারি বাড়ি প্রাঙ্গণ।