বাসস
  ০৭ মে ২০২৫, ১২:৫৯

লালমনিরহাটে জমে উঠেছে পশুর হাট

লালমনিরহাটে জমে উঠেছে পশুর হাট । ছবি : বাসস

লালমনিরহাট, ৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশুর হাটগুলো জমে উঠছে। 

জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বড়বাড়ী হাটসহ অন্যান্য পশুর হাট গুলোতে ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার আমদানি শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে লালমনিরহাট।

উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এ জেলার পাঁচটি উপজেলায় সাপ্তাহিক পশুর হাটগুলো এখন গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই হাটগুলো সাধারণত সাপ্তাহিক ভিত্তিতে হয় থাকে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জেলার উল্লেখযোগ্য হাটের মধ্যে রয়েছে: দুড়াকুটি, নবাবের হাট (বিডিআর হাট), নয়ারহাট, শিয়ালখোয়া, চাপারহাট, দইখাওয়া, বড়খাতা এবং ঐতিহ্যবাহী গরুর হাটের মধ্যে অন্যতম বড়বাড়ীর হাট ।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে বড়বাড়ী হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি গরুর আধিক্য এবং বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখর হাট প্রাঙ্গণ। বড়বাড়ী হাটে সপ্তাহে দুইদিন পশুর হাট  বসে বুধবার ও রবিবার ।আজ সকাল ৯টার আগেই পুরো হাট গরুতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। গরুর দাম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ মাঝারি আকারের গরুর দিকে বেশি।

গরু কিনতে আসা মোহাম্মদ আলী জানান, "ঈদের কিছুদিন আগেই হাটে এসেছি, কারণ ঈদের আগ মুহূর্তে গরুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। আজ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি। দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। হাটে প্রচুর গরু উঠেছে, তবে দালালদের কারনে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

সোয়াইব আলী নামের একজন ক্রেতা বলেন, ৭২ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির জন্য একটি গরু কিনেছি। টাকার সমস্যার কারনে তিনজন মিলে ভাগে গরুটি কিনেছি।

কামাল হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছি। হাটে প্রচুর ছাগল উঠেছে।

কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ী উপজেলার খামারি আবুল হোসেন জানান, চারটি গরু নিয়ে হাটে এসেছিলেন, এর মধ্যে তিনটি মাঝারি আকারের গরু ভালো দামে বিক্রি হলেও বড় গরুটি বিক্রি হয়নি।

আবার অন্যদিকে কিছু ক্রেতার অভিযোগ , গরুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় পছন্দের পশু কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের নাজমুল ইসলাম বলেন, ঈদের এখনও কিছুদিন বাকি রয়েছে আগেভাগেই গরু কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে গতসপ্তাহে তুলনায়। একই এলাকার আনিসুল হক গরু ব্যবসায়ী বলেন, অনেক খোঁজ করে একটা ছোট গরু কিনেছি,এই গরু ঈদের আগে মুহূর্তে বিক্রি করলে কিছুটা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

বড়বাড়ী ইউনিয়নের খামারি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ৮ থেকে ৯ মণের তিনটি গরু এনেছি, প্রত্যাশা ছিল প্রতিটির দাম ২ লাখ ২০ হাজার টাকার ওপরে উঠবে। কিন্তু কেউ সে দাম দিচ্ছে না।

গরু ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের মতে, এই মুহূর্তে মাঝারি গরুতেই বেশি আগ্রহ ক্রেতাদের। ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। অর্থনৈতিক কারনে বড় গরুর চাহিদা কমে গেছে।

খামারিরা জানান, গো-খাদ্য ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম তুলনামূলক কমেই রয়েছে।  সদর উপজেলার খামারি আফসার মিয়া বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে।পাশাপাশি হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন, নির্বিঘ্ন যাতায়াত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার অধিকাংশ খামারিরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করেছেন। হরমোন বা ইনজেকশন ব্যবহার অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। তবুও কেউ যাতে অসুস্থ বা অস্বাস্থ্যকর গরু বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, কোরবানিযোগ্য পশু গণনার কাজ আমাদের চলমান রয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে। তবে এবার জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি হতে পারে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে হাজার হাজার পশু জেলার বাইরে সরবরাহ করা যেতে পারে।

সব মিলিয়ে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, জেলায় পশুর হাটগুলোতে বড় গরুর তুলনায় মাঝারি গরু ক্রয়-বিক্রয়ের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে—এটাই এবারের কোরবানির বাজারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।