শিরোনাম
।। মহিউদ্দিন সুমন।।
টাঙ্গাইল, ৫ মে, ২০০৫ (বাসস) : জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ এবং আশাতীত ফলনে সোনালি দিনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ভুট্টা চাষ করেই সংসারে সুখের দিন আনবেন তারা। সরকারিভাবে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান, অনুকূল আবহাওয়া এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে চলতি মৌসুমে জেলায় ভুট্টার আশাতীত ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার যমুনার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরাও অধীর আগ্রহে জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন। চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২ টি উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর । কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৫১ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবত আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
কৃষকরা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেতে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যেখানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৬ মণ ধান পাওয়া যায়। সেই একই জমিতে প্রতি বিঘায় ভুট্টা উৎপাদন হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন।
ভূঞাপুরের চরাঞ্চল গাবসারা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল ও অজুনা ইউনিয়নের মাঠজুড়ে চলছে এই চাষাবাদ। সেখানকার কৃষকরা জানান, মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত বীজ ও সার সহায়তা এবং মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ তাদের কাজে এসেছে।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর চর নলহড়া গ্রামের কৃষক হায়দার আলী বলেন, আমি কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা হিসেবে যুবরাজ ও গঙ্গা-পদ্মা জাতের হাইব্রিড ভুট্টার বীজ পেয়েছিলাম। আমার দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি।
কালিহাতী উপজেলার বেলেটিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় আমাদের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এ বছর ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করছি বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ভুট্টা পাব। গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর আরও বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার দেখাদেখি যারা অন্য ফসল আবাদ করতো তারাও এ বছর ভুট্টা চাষ করেছে।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের বাগুয়াটা ব্লক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য আমরা সরাসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টা চাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমণ করলে সেগুলো দমনেও কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, ‘ভুট্টা এখন এই জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় ভুট্টার রোগ, পোকামাকড় দমন ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যমুনার চরাঞ্চলের মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছি। এতে করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
কৃষিবিদ আশেক বলেন, ‘ভুট্টা এখন শুধু খাদ্যশস্য নয়, পোলট্রি ফিড শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই কৃষকের পক্ষে। আর সে কারণেই ভুট্টা চাষে সাফল্য কৃষকদের দিয়েছে নতুন আশার আলো।’