শিরোনাম
ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় আজ রোববার বিইউপি ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা অডিটরিয়ামে ‘রিপ্যাট্রিয়েশন অব রোহিঙ্গাস ইন বাংলাদেশ: স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিকেশনস অন রিজিওনাল সিকিউরিটি এন্ড ওয়েজ অ্যাহেড’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে কূটনীতিক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সামরিক এ্যাটাশে, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাগণ, রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ, মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ এবং বিইউপি’র ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
এই সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের আলোচনা ও অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কৌশলগত প্রভাব ও এর চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ ও সুপারিশ করা।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিইউপি'র উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহবুব-উল আলম।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির প্রভাব ও সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতির জটিলতা তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সমন্বিত সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ তাদের বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্ভাব্য সকল উপায় ও বহুমাত্রিক কূটনীতি অবলম্বনের মাধ্যমে এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে আশাবাদী।
অন্যান্য বৈশ্বিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ যেন সরে না যায়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
তাছাড়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে একটি রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি এবং জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) মূল অংশীদার বিধায় যেকোনো স্থায়ী সমাধানে এই তিন পক্ষকেই যুক্ত হতে হবে।
রোহিঙ্গা বিষয়ক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. সাহাব এনাম খান।
এছাড়া, আবু সালাহ মো. ইউসুফ, রিসার্চ ডাইরেক্টর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এবং সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান তালুকদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বিইউপি প্যানেল আলোচক হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবির সেমিনারের উন্মুক্ত আলোচনা ও সারাংশ সেশন পরিচালনা করেন যেখানে অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত তাঁদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করলেও বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার বিষয় উঠে আসে, যার মধ্যে রয়েছে রাখাইন অঞ্চলের বর্তমান অস্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আরাকান আর্মির অনিশ্চিত অবস্থান এবং ভৌগোলিক রাজনীতির বিভাজন।
বক্তারা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সংমিশ্রণে বাংলাদেশে পক্ষ থেকে একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানান।
সেমিনারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করে প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনকে স্থিতিশীল করা, বৈশ্বিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব পক্ষের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
সেমিনারটি রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।