শিরোনাম
রংপুর, ৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২০২৫ রবি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের আওতাধীন পাঁচটি জেলার কৃষকরা ৩৯ হাজার ৮শ’ ৬২ টন মিষ্টি আলু উৎপাদন করেছেন।
বাম্পার উৎপাদনের পর জাত ও মানের উপর নির্ভর করে স্থানীয় বাজারে মিষ্টি আলুর দাম প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পাওয়ায় কৃষকরা খুশি।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (ডিএই)’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় ১ হাজার ৮শ’ ৯৫ হেক্টর জমি থেকে ৪৪হাজার ৬শ’ ১৭ টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে, কৃষকরা ১ হাজার ৬শ’ ৫৩ হেক্টর জমিতে এই ফসল চাষ করেছেন, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪২ হেক্টর কম। কারণ বেশি জমিতে শীতকালীন সবজি, ভুট্টা ও আলু চাষ করা হয়েছিল।
ফসল কাটার পর, কৃষকরা এবার ৩৯ হাজার ৮৬২ টন মিষ্টি আলুর উৎপাদন করেছে, যা ২০২৩-২০২৪ রবি মৌসুমে এই অঞ্চলে ৩৯ হাজার ৬৮৮ টন ফসল উৎপাদনের তুলনায় ১৭৪ টন বেশি।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বাসস-কে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চর ও নদী তীরবর্তী মানুষ ও কৃষকরা বেলে-অনুর্বর চর ও মূল ভূখণ্ডে অত্যন্ত লাভজনক মিষ্টি আলুর চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বালু-দোআঁশ ও বালুকাময় জমি মিষ্টি আলু চাষের জন্য উপযুক্ত। এই জমিতে চাষের জন্য কোনও সার ও সেচের প্রয়োজন হয় না।
বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর মহিপুর গ্রামের ভূমিহীন কৃষক নূর ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মজিবর রহমান জানান, তারা বালুকাময় চর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছেন এবং এ মৌসুমে ব্যাপক মিষ্টি আলু উৎপাদন করেছেন।
একইভাবে, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চর বিশ্বনাথ গ্রামের কৃষক আব্দুল হক, ইয়াসিন আলী ও মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, তারা এ বছর মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন ও ফসলের ভালো দাম পেয়েছেন।
খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগে স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) প্রাপ্ত কৃষিবিদ ডা. এম এ মজিদ বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি একটি মিষ্টি আলু খেলে দৈনিক ১৩ গ্রাম ভিটামিন ‘এ’র চাহিদা পূরণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘মিষ্টি আলুতে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও খনিজ পদার্থ থাকে, যা ভাতে অনুপস্থিত। মিষ্টি আলু প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘বি১’ ও ‘বি২’ সমৃদ্ধ, যা মানবদেহের জন্য অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন যে ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউগিনি, কিছু আফ্রিকান ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশের মানুষ ভাতের বিকল্প হিসেবে মিষ্টি আলু খায়। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে এটি প্রধান কার্বোহাইড্রেট উৎস হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ বালুকাময়, বেলে-দোআঁশ জমি, চরভূমি ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় মিষ্টি আলু চাষ করছে এবং অন্যান্য অনেক দেশের মতো বিকল্প খাদ্য হিসেবে মিষ্টি আলুকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করছে।
ডা. মজিদ বলেন, ‘আমরা যদি সাধারণ মানুষকে মিষ্টি আলু খাওয়ার অভ্যাসে পরিণত করতে পারি, তাহলে আমরা ভাতের ওপর চাপ অনেকাংশে কমাতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, এই বিষয়টি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।