বাসস
  ০১ মে ২০২৫, ১৯:০৩

গলাচিপায় হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন আলু

গলাচিপায় হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন আলু। ছবি: বাসস

|| এনামুল হক এনা ||

পটুয়াখালী, ১ মে, ২০২৫ (বাসস): জেলার গলাচিপা উপজেলায় হিমাগারের অভাবে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন আলু মাঠে, ঘাটে ও বাড়ির আঙিনায় পচে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটে যাওয়ার পর অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেকে আলু বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আলু চাষিরা।

গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে গলাচিপায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। উৎপাদন বাড়লেও হিমাগার না থাকায় তা সংরক্ষণে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এলাকার পাইকারি ক্রেতারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কৃষক রহিম উদ্দিন জানান, গত বছর লাভজনক হওয়ায় ধার দেনা করে এ বছর ৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলেও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও সংরক্ষণের অভাবে অধিকাংশ আলু বিক্রি করতে না পেরে পচে যাচ্ছে। ঋণ শোধ নিয়ে তিনি চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

একই গ্রামের আরেক কৃষক মোসলেম আলী জানান, এক একর জমিতে আলু চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে না পারায় এরই মধ্যে ৩০-৪০ মন আলু নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি আলু বিক্রি করতে পারলেও অর্ধেক খরচ উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

এই অঞ্চলের কৃষকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রথমে কিছু আলু নিলেও, আলুর আকার ছোট হওয়ায় পরে আর নেয়নি। অপরদিকে পাইকাররাও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রতিদিন বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে মাঠে পড়ে থাকা আলু পচে নষ্ট হচ্ছে।

এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার জানান, এবার উপজেলায় আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু হিমাগার না থাকায় তা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এর ফলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষকদের বিকল্প উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়ার কারণে মাঠে রাখা কিছু আলু নষ্ট হয়েছে। তবে বিষয়টি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে গলাচিপায় একটি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই গলাচিপার কৃষকরা কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য, সংরক্ষণের অভাব এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। লাভজনক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আলু এখন লোকসানের ফসলে পরিণত হয়েছে। কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলে দ্রুত হিমাগার স্থাপন ও সরকারি সহায়তায় সরাসরি বিপণন ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।