শিরোনাম
ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সংস্থাসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন করা ও সব কর্মসূচি সুসংহত করা বিষয়ে সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি দিয়েছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সব বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ণ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘নারী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয় ও বাস্তবায়নের ভূমিকা শক্তিশালীকরণে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সংস্থাসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন করা ও সব কর্মসূচি সুসংহত করা। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধিতে নারী উন্নয়ন ও সমতা প্রতিষ্ঠায় দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত করা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে জবাবদিহির ব্যবস্থা নেওয়া ও নারীপুরুষ সমতা বিষয়ক ইউনিট/সেল প্রতিষ্ঠা করা। জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা প্রকল্প প্রণয়ন নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং জেন্ডার বাজেটের ব্যয় পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করা।’
এছাড়াও সুপারিশে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নারী অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক নেতৃত্বদানকারী মন্ত্রণালয় হিসেবে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রতিষ্ঠিত করা ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব একজন পূর্ণ মন্ত্রীর কাছে ন্যস্ত করা। সরকারি ও বেসরকারি সব কর্মস্থলে জেন্ডার সংবেদনশীল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এলাকা ভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও কর্মজীবী নারীদের জন্য আবাসিক হোস্টেল স্থাপন করা।’
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে নভেম্বরে। চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩টি নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে ৩৯টি পরামর্শ সভা করে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সাথে নয়টি সভায় মিলিত হয়। পরামর্শ সভাগুলো হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংগঠনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।
সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি ও নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিত করে সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।’
তিনি জানান, সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিছু এ সরকারই করে যেতে পারবে, কিছু পরের নির্বাচিত সরকার করতে পারবে এবং নারী আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে।