শিরোনাম
প্রতিবেদন : সাইফুল ইসলাম
ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ভাষা আন্দোলন বাঙালির সকল মুক্তি সংগ্রাম আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল ভিত্তি।
এই আন্দোলনের চেতনায় বলিয়ান হয়ে বাঙালি অর্জন করেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় থেকে ২৪-এর স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ। তাই এ দেশের ইতিহাসের পাঠ পরিক্রমায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অত্যন্ত তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ।
এই মহান ভাষা আন্দোলনে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের অনেকেই আর নেই। যে ক’জন এখনও জীবিত তাদের অন্যতম আলমগীর মহিউদ্দীন। তিনি ছিলেন ওই সময়ের তরুণ সাংবাদিক। আলমগীর মহিউদ্দীন বর্তমানে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক।
সম্প্রতি তিনি ভাষা আন্দোলনকালের টুকরো টুকরো স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরেন বাসস-এর তরুণ প্রতিবেদক সাইফুল ইসলামের কাছে। একজন নবীনের কাছে প্রবীণের স্মৃতিতে অগ্নিগর্ভ বায়ান্নোর রূপ কোমলতা ও দরদের সাথেই তিনি তুলে ধরেন।
ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার নেপথ্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হলো উর্দু ভাষায় কথা বলতে হবে। না হয় ইংরেজিতে কথা বলো। তখন আমরা বলেছি আমরা বাংলায় কথা বলবো। বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলা। এ ভাষার বাইরে আর অন্য কোন ভাষা কখনো এ জাতি মেনে নিতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘এদিকে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির একগুঁয়েমি, আর চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা অপরদিকে বাঙালির জাতীয়তাবাদের চেতনা, সব মিলিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী করে তোলে। আর এই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবাই এক হয়ে গেল। একযোগে সবাই ভাষা রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়লো।’
নিজের ভাষাকে ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ইংরেজরা ইংরেজি ভাষাটাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তারা ইংরেজি ভাষাটাকে শুধু নিজেদের না, সারা দুনিয়ার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর সব গবেষণা ইংরেজি ভাষায় হচ্ছে। ওরা চিন্তাই করতে পারে না, ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কোন ধরণের গবেষণা হতে পারে।’
বাঙালিরা নিজের ভাষাটাকে দূরে ফেলে ইংরেজি বা অন্য ভাষার ব্যবহার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাঙালিরা যে কথা যেভাবেই চিন্তা করে তা সবার ওপর চাপিয়ে দিতে পারে। সমস্যা হচ্ছে তারা যা ভাবে বা করে তা নিজেদের ওপর চাপাতে পারে না। এর ফলে আমাদের মধ্যে অন্যান্য ভাষার ব্যবহার বেড়ে গেছে।’
আলমগীর মহিউদ্দীন বলেন, ‘কেউ ইংরেজদেরকে বলতে পারবে না তুমি বাংলায় কথা বলো। সে মরে গেলেও বলবে না। আর আমরা নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে চাই না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই, ভাষার জন্য এত মানুষ জীবন দিয়েছে। এত রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা ভাষার ব্যবহার কমছে। ইংরেজি ভাষায় কথা বলার চর্চা বাড়ছে। অনেকে ইংরেজি বলাকে স্মার্টনেস মনে করেন। এটা আমাদের জাতীয় সত্ত্বাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যে কোন উপায়ে হোক এই ধ্বংসের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। এখানেও তরুণদের ভূমিকাই অগ্রণী।’
তিনি বলেন, ‘যারা ভাষা আন্দোলন করেছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতি তার নিজের সত্ত্বাকে বুঝতে শিখেছে। নিজের দেশের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান না থাকলে সাধারণ মানুষের প্রতিও শ্রদ্ধাবোধ থাকবে না।’
প্রবীণ সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিনের জন্ম নাটোর জেলায়। তিনি চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দীন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীকালে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে আলমগীর মহিউদ্দিন দুই কন্যা সন্তানের জনক।