বাসস
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৯
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৪

সাক্ষীর জবানবন্দি : রিকশা চালিয়ে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে যাই

ঢাকা, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। নিজেই সেদিন রিকশা চালিয়ে গুলিবিদ্ধ সহকর্মী সাংবাদিককে নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাই। ওই দিন সন্ধ্যায় আমার সেই সহকর্মী সাংবাদিক হাসপাতালে মারা যায়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় দেওয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে এ কথা বলেন সিলেটের ফটোসাংবাদিক মোহিদ হোসেন।

আজ সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এ দেওয়া জবানবন্দিতে দৈনিক একাত্তরের কথা’র ফটোসাংবাদিক বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার দেশব্যাপী বিএনপি আয়োজিত গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী সিলেটে গায়েবানা জানাজা শেষে কালেক্টরেট মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের হলে মুসল্লিদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। সেখানে আমরা সংবাদ সংগ্রহের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। একপর্যায়ে আমরা সেখানে থাকা পুলিশের এডিসিকে উদ্দেশ্য করে বলি যে, দস্তগীর ভাই, আমরা সাংবাদিক আমাদের গুলি কইরেন না। কিন্তু সেখানেই পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢলে পড়ে দৈনিক জালালাবাদ ও নয়াদিগন্তের ফটোসাংবাদিক আবু তোরাব। পুলিশের এডিসি সাদিক কাউসার দস্তগীর, এসি মিজানুর রহমান ও ওসি মহিউদ্দিনসহ অন্য পুলিশরা গুলি করে।’

জবানবন্দিতে সাংবাদিক মোহিদ হোসেন বলেন, ‘গুলিতে রক্তাক্ত সহকর্মী আবু তোরাবকে হাসপাতালে নিতে কোনো যানবাহন পাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে একটা রিকশা পাই। তবে সেটির চালক তখন সেখানে ছিল না। তাই নিজেই রিকশা চালিয়ে গুলিবিদ্ধ সহকর্মী তোরাবকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটি। পরবর্তীতে একপর্যায়ে রিকশা থেকে নামিয়ে সিএনজিতে করে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে, যথাযথ চিকিৎসায় বাধা আসায় পরবর্তীতে সাংবাদিক আবু তোরাবকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটে আবু তোরাব মারা যায়।’

এদিকে আজ ট্র্যাইব্যুনালে সাংবাদিক মোহিদ হোসেনের দেওয়া ঘটনার দিনের গুলির ও রক্তাক্ত আবু তোরাবকে রিকশায় হাসপাতালে নেওয়ার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। এসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে, এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল।

এই মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরো দু’টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচারকাজ চলছে।