বাসস
  ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৭:১২

চার দশকের আইনি লড়াই : হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার রায় বহাল

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : চার দশক আইনি লড়াই করা হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের করা রিভিউ খারিজ করে আজ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ।

বিনা ফি’তে আদালতে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ওমর ফারুক। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শামীম খালেদ।

চার দশকের আইনি লড়াই বিষয়ে হরেন্দ্রনাথ বলেন, স্নাতক পাস করে ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখায় ১৯৮০ সালের দিকে যোগদান করেন তিনি। পরে তিনি যাত্রাবাড়ী শাখায় কর্মরত অবস্থায় রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা শাখা থেকে লোকাল অফিসে পাঠানো হয়। তবে কিছুদিন পর ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওই টাকা পাওয়া যায়নি বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তহবিল তছরুপের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে হরেন্দ্রনাথসহ নয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৬ সালের মার্চে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনা সূত্রে ‘পকেট ব্যাংকিংয়ের’ অভিযোগে সামরিক আদালতে হরেন্দ্রনাথের সাজা হয়। সাজা ভোগ শেষে ১৯৯০ সালে তিনি কারামুক্তি পান। তবে এর আগেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

পরবর্তী সময়ে অর্থ আদায়ে হরেন্দ্রনাথসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১৯৮৮ সালে নিম্ন আদালতে মামলা (মানিস্যুট) করে। সে  মামলায় একতরফা রায়ে নয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে আদেশ দেয় প্রথম সহকারী জজ আদালত। সে আদেশের বিরুদ্ধে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আবেদন (বিবিধ মামলা) করেন হরেন্দ্রনাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আবেদন গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে হাইকোর্ট সে আপিল খারিজ করে ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল করে। গত ৯ ডিসেম্বর সে লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন  সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে মামলার ব্যয় বাবদ (খরচ হিসেবে) তিন মাসের মধ্যে হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ করে সোনালী ব্যাংক। সে রিভিউ আজ খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের হরেন্দ্রনাথের বয়স এখন ৭৮ বছর। তার বিরুদ্ধে এই মামলা চালিয়েছে ৪০ বছর। যেখানে এই মামলায় নয়জন বিবাদীর মধ্যে শুধু তিনি বেঁচে আছেন।