শিরোনাম

ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন আপসহীন নেত্রী ও দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহু চ্যালেঞ্জ, সংকটের মধ্যে দিয়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের বহুদলীয় রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ও প্রভাব অনস্বীকার্য।
দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। তারা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আজ রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশি মো. শেখ ফরিদ বাসস’কে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।
তিনি বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহু চ্যালেঞ্জ, সংকটের মধ্যে দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের বহুদলীয় রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ও প্রভাব অনস্বীকার্য।
শহীদুল ইসলাম রাসেল নামের একজন ব্যবসায়ী খালেদা জিয়ার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শীর্ষ নেত্রী ছিলেন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন বলেও জানান তিনি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. মোমিন হোসেন শিপন বাসস’কে বলেন, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে এখন বেগম খালেদা জিয়ার খুব প্রয়োজন ছিল। তিনি খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পথচারী আমজাদ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও কর্মঠ সরকার প্রধান ছিলেন। তিনি গরিব ও সাধারণ মানুষের জন্য দেশে অনেক কাজ করেছেন।
রিকশা চালক আবদুল আজিজ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ নিরাপদে ছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কম ছিল। তিনি দেশে অনেক ভালো কাজ করেছেন। আল্লাহতায়ালার কাছে তাঁর জন্য দোয়া করি।’
রাজধানীর মিরপুর মনিপুরী পাড়ার শিউলি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাসস’কে বলেন, ‘সকালে কাজে গিয়ে শুনলাম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। খবরটা শোনার পর আর সেখানে দাঁড়াতে পারিনি। কাজ ফেলে সোজা বাসায় চলে যাই, তারপর জিয়া উদ্যানে চলে এসেছি। কথা বলতে বলতে চোখের পানি মুছেন তিনি। শিউলি বেগম আরও বলেন, ‘আজ তারেক রহমান এতিম হয়ে গেলেন। ছেলেটার আর কেউ রইলো না। মা-ই তো ছিল তার সবকিছু।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন লাখো মানুষের মায়ের মতো। আজ শুধু বিএনপি না, আমরা সবাই একজন আপন মানুষকে হারালাম।’
শিউলি বেগমের মতো অসংখ্য সাধারণ মানুষ শোক আর কান্নায় ভেঙে পড়েন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে। তাদের চোখের জল আর আবেগই বলে দেয়, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা সাইফুল হক খান বলেন, ‘আমরা পুরো জাতি আজ শোকাহত ও উৎকণ্ঠিত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পর বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া যে নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা নিয়ে দেশকে পথ দেখিয়েছেন—তা ইতিহাসে অনন্য।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে যে মর্যাদা অর্জন করেছেন, তা ইতিহাসে বিরল। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবং আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশনেত্রী হিসেবে তাঁর অভিভাবকসুলভ দিকনির্দেশনা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
সাইফুল হক খান আরও বলেন, ‘তাঁর অনুপস্থিতি জাতির জন্য এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করবে। আমরা আশাবাদী তাঁর সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে।’
খালেদা জিয়ার সাবেক ব্যক্তিগত স্টাফ মো. হুমায়ুন পাটোয়ারী বাসস’কে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে তিনি কখনো স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেননি। দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তী প্রায় ১৭ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি ছিলেন দৃঢ় ও আপসহীন।
তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনে গেলেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই নির্বাচনে অংশ নেননি। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তিনি সক্রিয় ছিলেন। ওই আন্দোলনে বহু নেতাকর্মী আহত হন, গুলিবিদ্ধ হন। তবুও আন্দোলন থেকে পিছু হটেননি দেশনেত্রী। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আজীবন কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করেননি এবং কখনো করবেন না—এটাই ছিল তাঁর রাজনীতির মূল দর্শন।
শনিরআখড়ায় বসবাসকারী তোফায়েল আহমেদ বাসস’কে বলেন, বাংলার মাটি ও মানুষ খালেদা জিয়াকে আপসহীন নেত্রী হিসেবেই চেনে ও জানে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দেশ গঠনের স্বপ্ন এগিয়েছে। তারেক রহমান জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন।
তিনি অনেক আগেই তার বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছেন, ভাইকে হারিয়েছেন এবং সর্বশেষ আজ তার মাকে হারালেন। তবে তিনি একা নন— তার সঙ্গে আছেন আল্লাহ এবং কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে চা দোকানদার সবুজ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এই অফিসের সামনে বহু বছর ধইরা চা বেঁচি, কতো ভালোবাসি মানুষটারে, আইজকে চইলা গেলো। সামনে ভোট, উনি দেইখা যাইতে পারলো না, বুকটা ফাঁইটা যাইতাছে।’
বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের সামনে এক কোণায় দাঁড়িয়ে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে আসা যুবদলের কর্মী সবুজ চোখ মুছছিলেন। ‘সবুজ বলেন, রাজনীতির কঠিন সময়ে চলে গেলেন আমাদের অভিভাবক। কতো কষ্ট পেলেন জীবনে। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুন।’