বাসস
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০৭

দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে এলাকার নেতা হিসেবে পাওয়া হলো না দিনাজপুরবাসীর 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

দিনাজপুর, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুরের কন্যা বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলের চেয়ারপারসনকে হারিয়ে শোকাহত দলীয় নেতাকর্মীসহ জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ। শোক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মাঝেও।

আজ সকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই জেলার ১৩টি উপজেলা, ১০৩টি ইউনিয়ন ও ৯টি পৌরসভা থেকে নেতাকর্মীরা শহরের গনেশতলা বিএনপির জেলা দলীয় কার্যালয়ে আসতে শুরু করেন। প্রিয় নেত্রীর প্রয়াণে আগতদের সবার চোখ আজ অশ্রুসিক্ত।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বাসসকে বলেন, আমাদের দিনাজপুরের কন্যা বিএনপির চেয়ারপার্সন ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না। তাকে দিনাজপুর -৩ (সদর) আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর মাত্র কয়েকদিন আগেই আমরা কয়েকজন জেলার নেতা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তার শিশুসুলভ আচরণ আমাদের মোহিত করেছিল। আমরা দিনাজপুরের মানুষ তাকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে নির্বাচিত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল। জাতির বড় প্রয়োজনের সময়ে তাকে আমরা আজ সবাই হারালাম। 

তিনি বলেন, এই দেশ ও জাতি যতদিন থাকবে, মানুষ দেশের এক আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ততদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি বাসসকে বলেন, ‘দিনাজপুরের কৃতি সন্তান বেগম খালেদা জিয়া দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দেশে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়েছে, তখনই তিনি শক্ত হাতে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। এমন নেতা আর জন্মাবে না। রাজনীতির অঙ্গনে আমরা আজ একজন অভিভাবক হারালাম। এ সময়ে তার বড় বেশি প্রয়োজন ছিল।

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোকাররম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। দিনাজপুরে মেডিক্যাল কলেজ, জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন, হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টার, শিক্ষা বোর্ডসহ যত উন্নয়ন হয়েছে সব হয়েছে দেশনেত্রীর হাত ধরে। উনার যে স্বপ্নগুলো রয়ে গেছে তা আমরা বাস্তবায়ন করবো।

দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা রওশনারা ছবি বাসসকে বলেন, তিনি দেশের জন্য যেমন গর্বের ছিলেন, তেমনি আমরাও গর্ব করে বলতাম বেগম খালেদা জিয়া এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বড় অসময়ে চলে গিয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে গেলেন।

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ৩৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি চির বিদায় নিলেন। এদিন সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে চিকিৎসকরা জানান ।

বেগম খালেদা জিয়ার মরহুম পিতা ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে পরিবার নিয়ে তার দিনাজপুরে আগমন ঘটেছিল। তারা দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। তাঁর মায়ের নাম বেগম তৈয়বা মজুমদার। বেগম খালেদা জিয়ার পিতৃ প্রদত্ত নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পরে তারা শহরের বালুবাড়ী শহীদ মিনার মোড়ে তৈয়বা ভিলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বাড়িটি বর্তমানে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। সেই বাড়িটিতে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল চলছে। দিনাজপুর শহরের ফরিদপুর কবরস্থানে খালেদা জিয়ার বাবা, মা ও বড় বোন চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ।

খালেদা খানম পুতুল ৫ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসের আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) পড়াশোনা করেন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দিনাজপুরের প্রথম প্রার্থী হওয়ায় সমগ্র জেলা ও শহরবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল।এখানে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রার্থী হননি। তবে সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার বড় বোন খুরশীদ জাহান হক।

নিজের জন্মস্থানে এবার প্রথম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসন থেকে ধানের শিষের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র গত ২৮ ডিসেম্বর জমা দিয়েছিলেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তাকে নির্বাচিত করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকা দিনাজপুরবাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুর জেলা বিএনপি, অঙ্গ সংগঠন, জেলা জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোট, জাতীয় পার্টি, জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, দিনাজপুর প্রেসক্লাব, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সর্বমহলের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। শোকবার্তায় তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর বিদায়ী রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়।