শিরোনাম
\ মহিউদ্দিন সুমন \
টাঙ্গাইল, ২ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২৪শের ২ আগস্ট শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং নয় দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল জেলার রাজপথ।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয় । যমুনা সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে শহরের সাবালিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের সাবালিয়া থেকে বের হয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বর্তমান (টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ) এর সামনে দিয়ে জেলা সদর মসজিদ হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ছাত্রদের এই মিছিলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও অভিভাবক এবং শিক্ষকরা যোগ দেন। মিছিলটি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করে। এ সময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।
ঐ দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিছিলটি শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে যমুনা সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশকপুর বাইপাস এলাকায় অবরোধ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এতে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান-চলাচল স্বাভাবিক হয়।
টাঙ্গাইলের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন সে সময় জানান, পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের কর্মসূচিতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে ফিরে গেছে।
সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মো. তুষার আহম্মেদ বাসস কে জানান, সেদিন আমরা যথাযথ কর্মসূচি পালনের জন্য বের হওয়ার পর পরই পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হই। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করেছিলাম। রাতে আমার মেসে পুলিশ আসে এবং আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমাকে হয়রানি করা।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হচ্ছে। আমরা আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পারছি না।
আমি মনে করি বিচার এবং পর্যাপ্ত সংস্কার ছাড়া যদি এই সরকার নির্বাচন দেয়, তাহলে সেটি হবে শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি।
জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জোবায়ের বাসস কে জানান, কোটা বিরোধী আন্দোলনে টাঙ্গাইলে প্রথম থেকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করল পরবর্তীতে সকল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী যুক্ত হয়। আমি খুব কাছে থেকেই আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছি আমার পরিবারের অনেক সদস্যই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং তাদেরকে দেখভাল করতে আমাকে বিভিন্ন সময় মিছিলের পাশে থাকতে হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন বিগত সরকারের পেটোয়া বাহিনী এবং সিভিল প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে এখানে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।
জেলার শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ সহকারী অধ্যাপক লেখক ও গবেষক ড. আলী রেজা বাসস কে জানান, সে সময় স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়ন, গুম, খুন ও হিংসাত্মক আচরণ, পুলিশ বাহিনীর নৃশংসতা সবকিছুকে উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা সেদিন যে গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তা দমন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
জুলাই ২৪ এর প্রতিটি দিন রাজপথে ক্ষুব্ধ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল।
সর্বস্তরের নারী পুরুষ, তরুণ তরুণী, কিশোর কিশোরী অদম্য সাহসিকতায় বুক চিতিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিল ‘ বুকের ভেতর ভীষণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর'।
তিনি আরো জানান, সরকারের দমনমূলক নীতির কারণে এ আন্দোলন সেদিন সর্বোচ্চ শক্তিতে গর্জে ওঠে ছাত্র জনতা। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে দেশের দেড় হাজার ছাত্র জনতা নিহত হয়। প্রায় বিশ হাজার ছাত্র জনতা আহত হয় যাদের বেশির ভাগের অঙ্গহানি ঘটে। গণ আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। গণজোয়ারে আওয়ামী বাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় মানুষ বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন রংপুরের আবু সাঈদ। পুলিশ যত গুলি চালায়, মিছিল তত বড় হয়। তখন জনরায় চলে যায় গুলি, গ্রেফতার, খুন, গুম, দমনপীড়ন ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখবার বিরুদ্ধে। এই জনরায়ের মানে হয়ে ওঠে সাম্য, ন্যায়নীতি ও মানবিক মর্যাদা। তাই জুলাই আন্দোলন আমাদের চেতনায় বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করেছে।