বাসস
  ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪১

পুরো রাজশাহী ছিল থমথমে

রাজশাহী বিশ্ববদ্যালয়ের দুই জন সহকারী প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান থানায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনেন। ছবি : বাসস

।। ওমর ফারুক।।

রাজশাহী, ২ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): কেন্দ্র ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি রাজশাহী মহানগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সেদিন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ২০২৪ সালের আজকের দিনে নগরজুড়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন ব্যাপক তৎপর। 

তবে পরদিন ৩ আগস্ট কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছাত্রদল, ইসলামি ছাত্রশিবির ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন জুলাই গণঅভ্যুথানের রাজশাহীর সমন্বয়করা। ২৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

কারফিউ চলাকালীন সময়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ফলে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য স্থানীয় জনগণসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঠের কর্মসূচিতে ডাকা হয়। তারা ডাকে সাড়া দেন। তবে অন্যদিনের মতো ২ আগস্টও রাজশাহীতে চলে গণগ্রেপ্তার। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল রাজশাহীজুড়ে। 

কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ২ আগস্ট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  ৯ দফা দাবি ঘোষণার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী  বাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তৎপরতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সক্রিয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়। এ কারণে কয়েকজন সমন্বয়ককে নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। তারা একটি পরিত্যক্ত ভবনে আশ্রয় নেন। মসজিদে মসজিদে দোয়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। 

আগের দিনের মতো এদিনও রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। সেই সঙ্গে মেসে মেসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলতে থাকে। সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যায়ের সামনে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। বেশ কিছু স্থানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিশকাত চৌধুরী মিশু বাসসকে বলেন, ২ আগস্টের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ছাত্রলীগ ও  যুবলীগ ক্যাডারদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কয়জন সমন্বয়ককে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়।

সেজন্য ওই দিনের আন্দোলন সফল করা সম্ভব হয়নি। 

তবে পরদিন আন্দোলনের জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করেছিলাম। আমরা ঝুঁকির মধ্যে থেকেও আন্দোলন বাস্তবায়নে কাজ করেছি। শেষ পর্যন্ত সকল শ্রেণীপেশার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। 

এদিকে, ওই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে আটক হওয়া এক শিক্ষার্থীকে মতিহার থানায় বসে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষকরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আশিকুর রহমান নামের ওই ছাত্রকে ছাড়িয়ে আনেন শিক্ষকরা। 

থানায় যাওয়া শিক্ষকরা জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আশিকুর মেইন গেট (প্রধান ফটক) দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। 

এই খবর জানতে পেরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন সহকারী প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান থানায় যান। তারা ওই শিক্ষার্থীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা রাবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ বাসস’কে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীকে আটকের খবর পেয়ে থানায় অবস্থান নিয়ে সেই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিলাম। আমরা শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলাম।