বাসস
  ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:২৬
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৯

বরিশালে ৯ দফা দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন

৩১ জুলাই বরিশালেও সারাদেশের মতো ৯ দফা দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালিত হয়। ছবি : সংগৃহীত

।। শুভব্রত দত্ত ।।

বরিশাল, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে এসে দেশব্যাপী যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয় বরিশালও তার অংশ হয়ে ওঠে। ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ডাকে সারাদেশে ৯ দফা দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়। 

এদিন বরিশালের পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে। স্থানীয় সাধারণ মানুষও এ কর্মসূচিতে স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।  

সরকারি ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) শাখার অন্যতম ছাত্র সমন্বয়ক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হুজাইফা রহমান বাসসকে বলেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের একের পর এক কর্মসূচি দেবার পর আমরা বরিশাল বিএম কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতন আন্দোলনের এক দফা আন্দোলনে সংযুক্ত হই। জোরালো ভাবে আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ৮ জুলাই ও ৯ জুলাই। সেদিন বিএম কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সকল ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে ছিলাম বরিশাল কেন্দ্রিয় বাসস্ট্যান্ড নতুল্লাবাদ। 

আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তাগত ঐক্য তৈরি হয়। আর সেই ঐক্যের কারণেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত ছাত্রলীগ বিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে সকল আন্দোলনে আমরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। 

তিনি আরো বলেন, ৩১ জুলাই ২০২৪ সেই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, মামলা ও হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। আমি তখন বরিশাল বিএম কলেজ শাখার সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলাম। সেদিন গ্রেফতার হওয়ার পাশাপাশি নির্মমভাবে পুলিশের লাঠিচার্জের স্বীকার হতে হয়েছিল আমাদের। অনেককে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে আহত অবস্থায় পরে থাকতে দেখা গেছে। 

বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে এই কর্মসূচি থেকে আমাকেসহ ১২ জন শিক্ষার্থী ও ১ জন প্রতিবন্ধী পথচারী সর্বমোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা হলো, হুজাইফা রহমান (বিএম কলেজ), নাঈম খান (বিএম কলেজ), অর্পিতা নন্দী বহ্নি (বিএম কলেজ), রাশেদুল হাসান (বিএম কলেজ), মো. আরাফাত (বিএম কলেজ), রাকিবুল ইসলাম শিহাব (মানিক মিয়া কলেজ), মো. হাসিববিল্লাহ (ববি), আব্দুল্লাহ মামুন (পলিটেকনিক ইনিস্টিউট), জান্নাতুল ফেরদৌস তানমিম (মানিক মিয়া কলেজ), লামিয়া সাইমন (বিএম কলেজ)। এরমধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থী ও ১ জন প্রতিবন্ধী পথচারী। ১০ জনের নাম খুঁজে পাওয়া গেলেও ৩ জনের নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি। এ সময় ঘটনাস্থলে ৪ জন সাংবাদিক ও ১০ জন আহত হয়। 

এ বিষয়ে বরিশাল বার সমিতির একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবি ও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, ৩১ জুলাই ২০২৪ বেলা সাড়ে ১০টার পর নগরের সদও রোড শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রতিবাদ মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও একাত্ম ঘোষনা করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে পুলিশি বাধার মুখে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। 

তারা আরো জানান, এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে কোন প্রকার উসকানি ছাড়াই পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। ছাত্র-জনতা সদও রোড ত্যাগ করে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ রোড জেলা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নিলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে আবারও পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। 

বরিশাল জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি (বর্তমানে কেন্দ্রিয় কমিটির অন্যতম সদস্য) ও বরিশাল জেলা বার সমিতির প্রবীন আইনজীবি এ.কে আজাদ বাসসকে বলেন, সেদিন ৩১ জুলাই ২০২৪ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি ও আন্দোলনে কোন প্রকার উসকানি ছাড়াই অকারনে পুলিশ লাঠিপেটা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের গ্রেফতার করেছিল। তারই প্রতিবাদ ও গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের আইনী সহায়তা দিতে আমিসহ একাধিক আইনজীবি বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় ছুটে গিয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সকল ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থাকার চেষ্টা করেছি। যা পেড়েছি, যতটুকু পেড়েছি ছাত্রদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ’র (প্রধান) সহকারী অধ্যাপক উম্মেস রায় বাসসকে জানান, ৩১ জুলাই ২০২৪ সেইদিন গ্রেফতারকৃত ১২ জন শিক্ষার্থী ও ১ জন প্রতিবন্ধী প গ্রেফতারের প্রতিবাদে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় ছুটে আসেন তিনি।

তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিরিহ ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্নভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিল। কোন কারণ ছাড়াই হামলা, মামলা, নির্যাতন-নিপীরন ও গ্রেফতার হচ্ছিল ছাত্র-জনতা। যে কারনে নিজের দ্বায়িত্ববোধ থেকে ছুটে যাই বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায়। কথা বলি পুলিশের ওসি’র সাথে। খোজঁ খবর নেই গ্রেফতারকৃত ছাত্র-জনতার। আমার স্বাধ্য মতো চেষ্টা চালাই সহযোগিতার।