বাসস
  ৩০ জুলাই ২০২৫, ১২:২০

কুমিল্লায় প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের পাল্টা কর্মসূচি

৩০ জুলাই ২০২৪, শিক্ষার্থীদের নামে হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ছবি: বাসস

\ দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ \

কুমিল্লা, ৩০ জুলাই ২০২৪ (বাসস) : ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে উত্তাল জুলাইয়ের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন ৩০ জুলাই। এদিন জেলায় আন্দোলন দমনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ সভা আয়োজন করে। অন্যদিকে, আন্দোলনের পক্ষে রাজপথে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও সরকারি দলের মহড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে দিনটি কুমিল্লায় দমনপীড়ন ও প্রতিরোধের মুখোমুখি অবস্থানের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।

৩০ জুলাই সকাল ১০টায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির এক জরুরি সভা বসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক খন্দকার মো. মুশফিকুর রহমান। 

এতে অংশগ্রহণ করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড পর্যায়ের জন প্রতিনিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ, শিক্ষক প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সদস্যরা।

সভায় জানানো হয়, চলমান আন্দোলনের কারণে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোটবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায়ের ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে’ নতুন করে সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়।          

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুজব প্রতিরোধ, ছাত্রাবাস ও মেসগুলোর তালিকা হালনাগাদ করে নজরদারি বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের বিষয়ে শিক্ষকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমের ওপরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। সভায় মসজিদভিত্তিক প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্বিঘ্ন যোগাযোগ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

তবে প্রশাসনিক দমন-পীড়নের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগঠিত হতে থাকে ছাত্ররা। ২৯ জুলাই গুলিবর্ষণের ঘটনার পরে তারা পরদিন ৩০ তারিখেই রাজপথে ফেরে।

শিক্ষার্থীদের নামে হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনের কুমিল্লা জেলা ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে ফোরামের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

বর্তমানে কুমিল্লা জেলা পিপি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বাসসকে বলেন, ‘সরকার মেধাবী ছাত্রদের খুন করে, গুলি চালিয়ে, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নামে মামলা দিয়ে গণতন্ত্র ও দেশের ভবিষ্যতকে হত্যা করতে চেয়েছিল। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে ওই সময় ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলাম।

আমরা এসব ঘটনার বিচার চাই।’ 

তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করার অধিকার আমাদের সংবিধানই দিয়েছে। অথচ তাতেও তারা বাধা দিয়েছে। সেদিন বক্তৃতা শেষে মিছিল নিয়ে বের হতে গেলে পুলিশ আমাদের আদালত গেটেই আটকে দেয়। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং আইনজীবীদের হুমকি দেয়।

এই দিনটিকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে মহড়া দেয়, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

নগরীর রানির বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. আশরাফুল ইসলাম জুলাইয়ের স্মৃতি স্মরণ করে বাসসকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ৫০-৬০ জনের দল মিছিল নিয়ে এলাকায় আসে। তাদের চেহারা ঢাকা, হাতে লাঠিসোঁটা। 

দোকানপাট বন্ধ করে সবাই ঘরে ঢুকে যায়। অনেকে অভিযোগ করেন, মহড়ার নামে সাধারণ মানুষকে হুমকি দেওয়া হয় যেন কেউ ছাত্রদের আশ্রয় না দেয় বা কোনো তথ্য সরবরাহ না করে।’