বাসস
  ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪০

ফেনীতে গণগ্রেফতার এড়াতে ছত্রভঙ্গ আন্দোলনকারীরা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফাইল ছবি

মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন

ফেনী, ২৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): চব্বিশের জুলাইয়ের শেষ দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। এক পর্যায়ে সেটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী এক দফায় পরিণত হয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। ছাত্রদের আন্দোলনে অংশ নেয় সব শ্রেণি পেশার মানুষ। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে জেলা শহরেও। ঢাকার সাথে তাল মিলিয়ে ফেনীতে কর্মসূচি পালন করতে গেলে সেখানেও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের বিচার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ১৬ জুলাই শহরের ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও মিছিল করে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের তৎকালীন সভাপতি মফিজ উদ্দিন মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মহসিন হোসেন এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ মিছিলে হামলা চালায়। মানববন্ধনকারীদের মারধর করে তাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে যায়। এরপর কোটা আন্দোলন ইস্যুতে ১৯ জুলাই ও ২১ জুলাই পৃথক দুটি ঘটনায় এসআই আল আমিন ও এসআই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর ৪০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তারপর শুরু হয় ধরপাকড়।

২৫ জুলাই দিবাগত রাতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৭০ জনকে গ্রেফতার করে। ফলে ২৬ জুলাই আন্দোলনকারীরা মাঠে থাকলেও গ্রেফতার এড়াতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সহযোগিতায় পুলিশ ১০ দিনে আরো ৯০ জনকে গ্রেফতার করে। আন্দোলনকারীসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়ায়।

জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে ফেনী শহর জামায়াতের সেসময়কার আমির মুহাম্মদ ইলিয়াছ বাসসকে বলেন, ‘১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করে। এরপর ৪টি মামলায়  আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট মুক্তি পাই’।

সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর নবী জানান, ‘পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে গেলে তিনি পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ধরে পুলিশে দেয়।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেসময়কার সমন্বয়ক অবদুল কাইয়ুম সোহাগ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়। সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল মাহফুজসহ আমাদের কয়েকজন ভাইকে পুলিশ অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। অন্যদের মামলা ছাড়াই কারাগারে প্রেরণ করে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর তারা মুক্তি পায়।’

ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান, ‘আসামি শনাক্ত না হওয়ায় ওই দুটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে।’