শিরোনাম
মো. তানভীর হাসান
সিলেট (শাবিপ্রবি), ১৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঢেউ একপর্যায়ে সিলেটেও ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের শুরু থেকেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত তাবাসসুম সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সিলেটে এই আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও। শাবিপ্রবিতে আন্দোলনকে সুসংগঠিত রাখতে যে সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়, জান্নাত ছিলেন সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি শুধু রাস্তায় নেমে স্লোগানই দেননি, বরং মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক কাজ, মিডিয়া কমিউনিকেশন—সব দিকেই রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। বর্তমানে তিনি ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শাবিপ্রবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’কে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জান্নাত স্মরণ করেন সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা। তুলে ধরেন আন্দোলনের সময়কার আতঙ্ক, ভয় আর অবর্ণনীয় দমন-পীড়নের স্মৃতি। বিশেষ করে নারীদের সংগ্রাম এবং ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আসা ভয়ভীতি—সব মিলিয়ে সময়টা ছিল ভীষণ কঠিন। তবুও পিছু না হটে লড়াই করে গেছেন তারা।
বাসস : জুলাই আন্দোলনের পেছনে কী কী কারণ কাজ করেছিল বলে মনে করেন ?
জান্নাত : জুলাই আন্দোলন প্রথমে গণআন্দোলন ছিল না। এটা ছিল ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন। স্বাভাবিক ভাবেই দেখা যেত ভার্সিটিতে ভর্তির সময় কোটা প্রথা বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে অনেকে ভালো সাবজেক্ট পেয়ে যাচ্ছে। একই পদ্ধতি বিসিএসের ক্ষেত্রেও। কোটার সুযোগে কেউ কেউ খুব সহজে জব পেয়ে যাচ্ছে। যার সিরিয়াল আগে সে জব পাচ্ছে না। এভাবে আসলে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধ যখনই হয়েছিল সেক্ষেত্রে ওই মুহূর্তে যদি তাদেরকে কোটার ব্যবস্থা কিংবা সাহায্য করা হতো সেটা মেনে নেওয়ার মতো। কিন্তু আজন্ম, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ এই প্রথা চলতে থাকবে এটা আসলে মেনে নেওয়া যায় না। এটা প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হতে পারে না। তো এটাই আমি চিন্তা করেছি। যখন আন্দোলন শুরু হয় আমাদের হলের সামনে এসে বলা হয়, ‘বোন তুমি বেরিয়ে পড়ো, নিজ অধিকার আদায় করো’। তখন আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। যদিও আমার বিসিএস দেয়ার কোন প্রস্তুতি ছিল না। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ইচ্ছে। তারপরেও আমার মনে হচ্ছিল যেটা অন্যায় সেটাকে অন্যায় বলতে হবে। এটাকে মেনে নেওয়া যাবে না। যেটা মেনে নেওয়ার বিষয় না সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। তো এই জায়গা থেকেই আমি আন্দোলনে যোগ দিই। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সক্রিয় ছিলাম। আর আন্দোলনের শুরুটা মূলত কোটার বিরুদ্ধেই ছিল। যাতে কোটা প্রথা বাতিল হয়। এই বিষয়টাকে হয়ত ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন ওনার স্বজন, পরিজন ও আপনজনদের গদিতে বসিয়ে রাখতে। উনি হয়ত চেয়েছিলেন ওনার রাজত্ব কায়েম করতে। যার কারণে শেখ হাসিনা হয়ত প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন না করে যারা ওনার দলের ছিল তাদেরকেই চাকরি দিতে চেয়েছেন।
বাসস : সিলেটের ক্ষেত্রে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা কিভাবে হয়েছিল এবং এর পেছনে কারা মূল ভূমিকা রেখেছিলেন?
জান্নাত : সিলেটের আন্দোলন বলতে গেলে অবশ্যই শাবিপ্রবি কেন্দ্রিক ছিল। সিলেটের অন্য কোথাও শুরুতে আন্দোলন হয়নি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সূচনা করেছিল এটাতো আমরা সবাই জানি। আমাদের সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু পরে যুক্ত হয়েছিল। সম্ভবত ৬ কিংবা ৭ জুলাই আমরা আন্দোলন করছিলাম ভার্সিটি গেটে। প্রতিদিনের মত সেদিনও আমরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছিলাম। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের একটি বাস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেতে চাইছিল। আমাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের যেতে না দিয়ে আটকে রাখে। তখন তাদের ও আমাদের মাঝে তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ঐ সময় আন্দোলন দেশব্যাপী ছিল না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যায় এই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিল। তাদের অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু সূতিকাগার বা সূচনা যদি বলা যায় তা অবশ্যই শুরু করেছে পাবলিক ভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সিলেটে শাবিপ্রবিতে আন্দোলনের শুরুতে মাস্টার্সের কয়েকজন ভাই মিলে একটা গ্রুপ খোলেন। সেই গ্রুপে আমরা যুক্ত হই। পরবর্তীকালে দেখা যায় ৩-৪ টা গ্রুপ খোলা হয় এবং পেজও খোলা হয় অনেকগুলো। প্রথমত আন্দোলনের সূচনা লগ্নে আমি যখন যেতাম তখন কাউকে চিনতাম না। আমার এক বান্ধবী আছে সুইটি আর কয়েকজন সিনিয়র আপু ছিলেন, গালিব ভাই, লুবনা আপু ছিলেন, ফয়সাল ভাই ছিলেন, তারপর আমরা অনেক জুনিয়র ছিলাম, যারা মোটামুটি নেতৃত্ব দিয়েছে। আন্দোলনে মেয়েদের যুক্ত করাটাও একটা বড় বিষয় ছিল। মেয়েদের নিয়ে পরে কোটা আন্দোলনের গ্রুপ খোলা হয়। ফেসবুক ও মেসেঞ্জার গ্রুপও খোলা হয়। সেই গ্রুপে আমাদের এক আপু ফেসবুক গ্রুপটা খুলে আমাকে এডমিন করে দেন। কারণ ওনি সবাইকে চিনতেন না, ওনি আমাকে বলছিলেন জান্নাত তুমি তো মোটামুটি প্রতিদিনই আসছ। তোমাকে আমি এডমিন করে দিই, তুমি সবার সাথে যোগাযোগ রেখো। তারপর আমি ওই ফেসবুক গ্রুপ আর মেসেঞ্জার গ্রুপের এডমিন ছিলাম। মেয়েদের একসঙ্গে করার বিষয়টা কঠিন ছিল। আমরা সবসময় জানি আমাদের বাংলাদেশে সবসময় মেয়েরা সবকিছুতে পিছিয়ে থাকে। আসলে মেয়েরা কিন্তু পিছিয়ে থাকতে চায় না। মেয়েদের সাহস আছে এবং এগিয়েই থাকতে চায়। কিন্তু কিছু মানুষ আছে আসলে তারা মেয়েদের পিছিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। তা ভেদ করে মেয়েদেরকে সামনে আনতে উদ্দীপনা জাগানোর যে ব্যাপারটা, বিভিন্ন ধরনের বয়ান দেওয়া, এইগুলোর জন্য আমরা গ্রুপ খুলেছিলাম এবং নিয়মিত গ্রুপে আমরা পোস্ট করতাম। এমনকি আমরা প্রত্যেকটি হলের সামনে গিয়ে গিয়ে, হলের ভেতরে গিয়ে চিল্লায়ে চিল্লায়ে আপুদের ডাকতাম। যে আপুরা আপনারা বের হয়ে আসেন। তারপর দেখা যাচ্ছে অনেক মেয়েই বের হয়ে আসতো। মূলত এসবের পেছনে অবশ্যই সমন্বয়কদের ভূমিকা ছিল। জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন মানেই অবশ্যই সমন্বয়কদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাসস : আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো এবং কারা তাতে যুক্ত থাকতেন?
জান্নাত : আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া যে খুব বেশি কঠিন ছিল ব্যাপারটা এরকম না। কিছু সিদ্ধান্ত ঢাকা থেকে আসত। তবে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিদিনই নতুন নতুন গিফট দিতেন, ওনার ওই গিফট এর প্রতিবাদ স্বরূপ আমাদের সাথে সাথে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে হতো। দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, পুলিশ হামলা করছে, মেয়েদের গায়ে হাত তুলছে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মসূচি দিয়ে দিতাম। ফলে স্বৈরাচারের প্রতিটা আচরণই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল।
বাসস : আন্দোলন চলাকালে বড় ধরনের কোন বাধা বা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল কি?
জান্নাত : আন্দোলনে এত এত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা, তবুও যদি সংক্ষেপে বলি, আমি মেয়ে হিসেবে প্রথমে মেয়েদের কথাই বলব। আমাদের ৭-৮ জুলাইয়ের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের ফেক আইডি তারপরে বিভিন্ন অচেনা নম্বর থেকে কল আসত, যারা আন্দোলনে মোটামুটি সক্রিয় ছিলাম তাদের কাছে। হুমকি ধামকি দিত, ইজ্জতহানি করবে এই ধরনের কথা বলত। এমনকি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করত। এই ভাষাগুলি মুখে বলার মতো না। হুমকি দিয়ে বলত, জীবন বাঁচাতে যদি চাই, ইজ্জত যদি বাঁচাতে চাই তাহলে যেন আন্দোলনে না যাই। এসব অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। একটা মেয়ের জন্য মৃত্যু ভালো, ইজ্জতহানির চেয়ে। ইজ্জতের কথাই বলত বেশি। একজন কোনো না কোনোভাবে ধারণ করা আমার এক বান্ধবীর গোপন ভিডিও আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে ভাইরাল করে দিয়েছে। এই ব্যাপারগুলো আসলেই ন্যাক্কারজনক ছিল। সে আমাদের শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী ছিল না, কিন্তু সিলেটে ছাত্রলীগ করত। সে অনেক নোংরা নোংরা ছবি আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে ভাইরাল করে দেয়। তো তার মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে যায় যে সে সুসাইডের দিকে চলে গিয়েছিল। সে সময়ে আমাদের এমন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তারপরে পরিবার থেকে তো একটা চাপ ছিলই। পরিবার থেকে মানা করতো সবসময়। আমি বাবা-মা কে বলিনি যে আমি আন্দোলনে যাই। তবে অন্য যারা ছিলেন তারা আমাকে টিভিতে দেখতে পায়। তো যখন টিভিতে দেখে তখন আমার বাবা আমাকে অনেক কথা বলা শুরু করে। নানা ভাবে বলে যে যেও না তুমি। এক পর্যায়ে বাবা আমাকে কসমও করে নেয় যে তুমি যদি যাও তাহলে কি তুমি আমার মরা মুখ দেখতে চাও? এ ধরনের কথাও বলে। তো আমি আন্দোলন থেকে এসে চিন্তা করি আব্বু আম্মু যখন বলছে তখন যাব না। কিন্তু পরের দিন যখন আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য ডাক আসে কিংবা স্লোগান শুনি তখন রক্ত গরম হয়ে যায়। আমার বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার খেয়ে রক্তাক্ত হচ্ছে এটা তো মেনে নেয়া যায় না। যখন ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে এ ধরনের ভিডিওগুলো দেখি তখন হাত-পা কেঁপে ওঠে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি না। বেরিয়ে পড়ি। আমার রুমমেট আপু বলেন আজকে তো মনে হয় তুমি যাবা না। যেহেতু কিছুক্ষণ আগেই বাবা আমাকে বলেছে না যেতে। কিন্তু আমি মিছিলের স্লোগান শুনে বের হয়ে পড়ি। তখন আপু বলেন যে কই যাচ্ছো? আপুকে বলতাম, আপু থাকতে পারছি না, থাকা সম্ভব না রুমের মধ্যে এভাবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে কি পারিবারিক ভাবে আওয়ামী লীগ ছিলাম আমরা। তো পরিবার তো জানতো না শেখ হাসিনা এমন ফ্যাসিস্ট হবে। ছাত্রদের এভাবে মারবে। আমার চাচুরা বিভিন্ন ভাবে বাবাকে বলতো ভাই তুই তোর মেয়েকে সামলা, না হলে পরে কোনো বিপদ হলে আমরা ওরে বাঁচাবো না। এমন কথাবার্তায় আব্বু আম্মু ভয় পেত। এত প্রতিকূলতার মুখেও মনে হত অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। মূলত ন্যায়বোধ থেকেই আন্দোলনে গিয়েছি।
বাসস : আন্দোলনের দিনগুলি সর্ম্পকে কিছু বলবেন?
জান্নাত : চব্বিশের ১৪ জুলাই রাতে আমরা যখন রাজাকার রাজাকার স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে পড়ি তখন ভাবতেও পারিনি এত শিক্ষার্থী হবে। আমরা কয়েকজন স্লোগান দেওয়ার সাথে সাথে হলের সকল আপু স্লোগান দিতে শুরু করেন। তারপর আমরা দেখি ভাইয়েরা মেসেঞ্জার গ্রুপে কথা বলতেছে মিছিল বের করবে তখন আমরাও বেরিয়ে পড়ি। পরে দেখি মিছিলের শুরু কোথায় শেষ কোথায় কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। সেদিন ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের কেউ কেউ বলেছিল, কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আমাদের ছাত্রলীগের কর্মীরাই যথেষ্ট। এ কথা একটি ইশারা ছিল। তো এই ইশারা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতারা রেডি হয়ে ছিল যে আজকের পর থেকে আন্দোলনকারীরা কিছু করলে তারা নিজেরাই অ্যাকশানে যাবে। তো এসব বলা মানে তো ওপেন লড়াই করতে পারো এমনই বলা। আমরা যখন ডি বিল্ডিং এর সামনে ও এ বিল্ডিং এর রাস্তায় যাই তখন আমাদের মিছিল ও ছাত্রলীগের মিছিল মুখোমুখি পড়ে যায়। তখন ওরা এত হিংস্র রূপ ধারণ করে যে আমাদের মেয়েদের ওপরও হাত তোলে। ছেলেদের মারতে গিয়ে মানে শিশির ভাইকে মারতে গিয়ে আমাদের গায়েও হাত তুলছে। খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা সেদিন ঘটেছিল, শিশির ভাইকে অনেক মর্মান্তিক ভাবে মেরেছিল। তারপরে ভাইয়েরা যখন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে যায় তখন ভাইদের ভর্তি করা হয়নি। তখন ভাইয়েরা ওসমানী মেডিকেলে যায়। একজন মানুষের রক্ত গড়িয়ে পড়ছে অথচ তাকে ভর্তি করা হচ্ছে না। এমনকি তাদের খুঁজতে ছাত্রলীগ হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। তখন রক্ত বন্ধ করার জন্য শুধু ব্যান্ডেজ করে পাঠিয়ে দেয়, কোনো ঔষধও দেয়া হয়নি। ছাত্রলীগ যখন ভাইদের হাসপাতালে খোঁজে তখন ভাইয়েরা ফ্লোরে ফ্লোরে লুকিয়ে পড়েছিল। ছাত্রলীগের বর্বর আচরণ, মারামারি, হামলা এসব তো ছিলই, তবুও আমরা ১৫ তারিখের আন্দোলন সুন্দর ভাবে সফল করি। সেদিন দুপুরে গেটে সিলেটের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। আবার অন্য দিনগুলোতে আন্দোলনের সময়ে যখন পুলিশের থেকে পালিয়ে আসতাম ছাত্রলীগ থেকে পালিয়ে আসতাম তখন দেখা যায় অনেকেই দরজাই খোলেনি। দোকানের ঝাঁপগুলো লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। তখন সবাই একটা ভয়ের মধ্যে ছিল।
বাসস : আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন কি বলে আপনি মনে করেন?
জান্নাত : ১৫ জুলাই আন্দোলনে ব্যাপক মানুষের সমাগম হয়, শুধু শিক্ষার্থী নয়, নানা শ্রেণির মানুষ যুক্ত হয়। লিডিং ইউনিভার্সিটি ও সিলেটের কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রী ছাড়াও সাধারণ মানুষও অংশ নেয়। ছাত্রলীগের হামলা ও আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর আন্দোলন তীব্র রূপ নেয়। মেয়েদের মধ্যেও নিরাপত্তা ও প্রতিরোধের জন্য এক অভূতপূর্ব প্রস্তুতি দেখা যায়। সেদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কোনো সংঘর্ষ হয়নি, পুলিশ নিরব ছিল। এটিই ছিল এক ধরনের তাৎক্ষণিক বিজয়। আন্দোলনের প্রকৃত শক্তি ও জনগণের একতা বোঝা যায় সেদিন। সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে মাত্র এক মাসেরও কম সময়ে। যে সরকার নির্মমভাবে ছাত্রদের হত্যা করেছে, মানুষ মেরে ট্যাংক থেকে ফেলে দিয়েছে, লাশ পুড়িয়েছে—তার পতন ছাত্রদের ঐক্য ও সাহসের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। হাসিনার অহংকার ও ক্ষমতার দম্ভই তাকে পতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটা আমাদের ইতিহাসের অন্যতম বড় বিজয়।
বাসস : আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষক বিশেষ করে জনসাধারণের ভূমিকা কেমন ছিল?
জান্নাত : ছাত্রদের ভূমিকা তো ছিলই। যেহেতু আন্দোলনটি তাদের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। সিলেটের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে ১৪ তারিখ যোগ দেয়। আর শিক্ষকরা ১৮ জুলাই হলের মেয়েদের হল ছাড়ার জন্য নোটিশ দেয়। যদিও এর আগেই আমরা ছাত্রী হলের প্রভোস্ট ম্যামের কাছে বলি আপনারা যাই করেন আমাদের হল ছাড়তে বলবেন না। হল থেকে আমরা বের হয়ে গেলে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। তাহলে আমাদের আন্দোলনটা সফল হবে না। তখন ম্যাম আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি আমাদের হল থেকে বের করবেন না। আমরা নিশ্চিত হই অন্তত আমাদের হল থেকে বের করবে না। কিন্তু ১৮ জুলাই ভোরবেলা আমাদের ১ঘন্টার মধ্যে হল খালি করতে বলেন। তখন ম্যাম বললেন, এখানে আমার কিছু করার নাই। তোমাদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা আমার ছিল। তখন আমি আর আমার রুমমেট সিদ্ধান্ত নেই আমরা রুম থেকে বের হব না। তখন হলের গ্রুপে ম্যাসেজ দিই যারা হলে থেকে যেতে চান সবাই আমাদের রুমে চলে আসেন। তখন প্রায় ১৫জনের মতো মেয়ে আমাদের রুমে থাকি। সকাল ৭টার মধ্যেই সব মেয়েরাই চলে যায়। সেখানে আমাদের রুমে আমরা সকাল ১১টা পর্যন্ত ছিলাম। তখন ম্যাম আমাদের কিছু বলতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে আমাদের রুমে এসে এমনভাবে অনুরোধ করেন। কাঁদো কাঁদো একটা চেহারা। মা তোমাদের যদি থাকার জায়গা না থাকে তোমরা আমার বাসায় এসে থাকো। কিন্তু তোমরা হলে থেকো না। উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা বের হই। আন্দোলন জোরালো না করার জন্যই এই কাজটি করা হয়েছিল। তারাও অনেকটা সফল হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষকদের একটা অংশ আমাদের পক্ষে ছিলেন। তারা আমাদের জন্য কাজ করছিলেন। খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। তারা আমাদের জন্য রাজপথে নেমে এসে মানববন্ধন করেছিলেন, অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলেন। অনেক শিক্ষক আবার ফ্যাসিস্ট এর সহযোগী ছিলেন। তারা আন্দোলনকে দমানোর সকল চেষ্টাই করেছেন। কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ সকল সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। পুলিশ যখন আমাদের দৌড়ানি দেয় আবাসিক এলাকার যে আন্টি, দাদুভাইরা উনারাও বের হয়ে পুলিশকে বকাঝকা করেন। ১৯ তারিখ একজন বাবার বয়সী আংকেল অনেক কান্নাকাটি করেন। এই ভিডিওটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি বলেন, আমাকে মেরে ফেলো, তবুও আমার বাচ্চাদের মেরো না। আমার মনে হচ্ছিল যে এরকম ভালো মানুষ আছে বলেই আমরা অনুপ্রেরণা পাচ্ছি, সাহস পাচ্ছি। তখন রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার সকল দল সহযোগিতা করেছিল। করবেই না বা কেন যখন চোখের সামনে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। একার পক্ষে আসলে আন্দোলন সফল করা সম্ভব না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল এই বিপ্লব। আন্দোলনে সর্বস্তরের রাজনৈতিক, পেশাজীবী, কর্মজীবী মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণেই সফল রূপ পায় এই জুলাই অভ্যুত্থান। এছাড়া আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে অনেকেই অনেকভাবে আমাদেরকে সহায়তা করেছে। কেউ কেউ ফ্রিতে আন্দোলনকারীদের পানি, সিঙারা, কলা, ব্রেডসহ নানা খাদ্যসামগ্রী ও বিভিন্ন কিছু দিয়েছে। যা আসলে আন্দোলনকে বেগবান করতে ব্যাপক সহায়ক হয়েছে।
বাসস : আপনাদের আন্দোলনের বার্তাগুলো জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে মিডিয়া কতটা সহায়ক ছিল?
জান্নাত : মিডিয়ার ভূমিকা অবশ্যই ছিল। মিডিয়া ছাড়া এই আন্দোলন সফল হওয়ার কথা ভাবা যায় না। মিডিয়ার ব্যাপারে নেগেটিভ বলার মতো আসলে আমি তেমন কোন কিছুই পাচ্ছি না। তবে, আন্দোলনের মাঝপথে কিছু বড় মিডিয়া আছে যারা চুপ ছিল। ছাত্রদের পক্ষে কথা বলেনি। আন্দোলন বানচালের চেষ্টা করেছে। এরা আসলে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। আর এসব তো থাকবেই। আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার মাধ্যমে মিডিয়াগুলোকে কুক্ষিগত করে ফেলেছিল। যার কারণে তাদের পক্ষে কথা বলবে এটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তারা আমাদের আন্দোলন বানচাল করতে পারেনি। অন্যদিকে যমুনা টিভিসহ যারা ছিল তারা আন্দোলনকে বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া সিলেটের যে মিডিয়াগুলো ছিল সকল মিডিয়াই আন্দোলনের সত্য বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে প্রতিনিয়ত গুলির আওয়াজের মধ্যেও লাইভের মাধ্যমে এসব নৃশংস হামলার চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। এজন্য বলব, অবশ্যই মিডিয়া এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মিডিয়া ছাড়া এই আন্দোলনের সফলতা চিন্তা করাই যেত না।
বাসস : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলন নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে?
জান্নাত : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুব বেশি সক্রিয় ছিল, বড় ভূমিকা রেখেছে এই আন্দোলনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা হতো তা দেখেই আমি অনুপ্রেরণা পেতাম। আমাদের একটা কর্মসূচি ছিল প্রোফাইল পিকচার লাল রঙের করা। যা আন্দোলনকে অনেক বেশি ত্বরান্বিত করেছিল। পুরো সামাজিক মাধ্যম লালে সয়লাব ছিল। যেটা আওয়ামী লীগের জন্য থ্রেটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটা ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের বড় প্রচার।
বাসস : আপনার দৃষ্টিতে, আন্দোলনের এক বছরের ভেতরে কি কি অর্জিত হয়েছে বা হয়নি?
জান্নাত : বিষয়টার পজেটিভ ও নেগেটিভ দুই দিকই আছে। আমি একজন নারী হিসেবে নারীদের দিকটাই আগে বলব। আন্দোলনের পর নারীদের সামাজিক মূল্যায়ন অনেক কমে গেছে। ধর্ষণের মতো ঘটনা আগেও ছিল, এখনো আছে। আমার নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, সিলেটের সুরমা আবাসিক এলাকা থেকে মদিনা মার্কেট যাওয়ার পথে একদিন রিকশা নিতে হয়েছিল, তখন এক অপরিচিত ছেলে আমাকে ও আমার জুনিয়রকে নিয়ে অসম্মানজনক মন্তব্য করে। এটি দু:খজনক।
আন্দোলনের সময় মেয়েরা সামনে থেকে অংশ নিয়েছিল, ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, অথচ এখন তাদেরই অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। আমাদের সেই ভাইয়েরাই, যাদের সঙ্গে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছি, এখন আমাদের বাদ দিচ্ছে। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন ভেঙে যাচ্ছে।
তবে পজিটিভ দিক হচ্ছে—নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি ও তাদের ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। এসব দলে শিক্ষিত, সচেতন মানুষ আছেন। তারা লোভনীয় বিদেশি অফার ফিরিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। এনসিপির নেতারা দেশের জন্য আশার প্রতীক। আমি চাই বাংলাদেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখুক এই দলের চোখে।
বাসস : কি কি উদ্যোগ নিলে মেয়েদের যে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না সেটা কাটিয়ে উঠা যাবে বলে আপনি মনে করেন?
জান্নাত : যদি পুরুষরা সত্যিই নারীদের মূল্যায়ন না করে, তাহলে বাস্তব উদ্যোগের কোনো অর্থ থাকবে না। প্রথমেই আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। ‘মেয়ে কম বুঝে’, ‘ঝামেলার’, ‘পিছিয়ে পড়া’—এরকম ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই সমস্যা শুধু কম শিক্ষিতদের মধ্যে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত ছাত্রদের মধ্যেও রয়েছে। গ্রামে পুরুষেরা প্রভাবশালী হয়ে নারীদের নির্যাতন করছে, একাধিক বিয়ে করছে। সরকারের ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীদের উদ্যোক্তা করার উদ্যোগ আছে, তবে পুরুষেরা সেই ঋণ নিজেদের কাজে ব্যবহার করে, নারীরা তার সুবিধা পায় না। ফলে ঋণের বোঝা নারীদের ওপরই পড়ে। তারা ব্যবসা করতে পারে না, সামান্য প্রয়োজনীয় জিনিসও কিনতে পারে না। সরকারের উচিত স্বাস্থ্য, গর্ভাবস্থা, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কাজ করা। নারী অধিকার মানে ফেমিনিস্ট হওয়া নয়, বরং গ্রামে গঞ্জের নির্যাতিত মেয়েদের রক্ষা করা। নারীদের বঞ্চিত না হওয়ার জন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। সরকার থেকে বেশি বেশি সেমিনার, প্রকল্প এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামের নারীদের এসব বিষয়ে সচেতন করা উচিত। এতে দেশের মানুষের মানসিকতায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে পারে।
বাসস : আন্দোলনটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে আপনি মনে করেন?
জান্নাত : আন্দোলনের পরে আমার জীবনে যে প্রভাব পড়েছে, তা খুবই গভীর। আন্দোলনের পর এমন এক মানসিক অবস্থা তৈরি হয় যে আমি সুইসাইড করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। ৫ আগস্টের আগে সমন্বয়কদের অনেক কদর ছিল, কিন্তু তার পরে সেই সম্মান ক্রমেই কমতে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, সমন্বয়ক হওয়া কি দোষের? একদল লোক বিভিন্ন ইস্যুতে সমন্বয়কদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এই রকম অবস্থার শিকার বারবার হয়েছি। কোনো দোষ না করেও দোষারোপের শিকার হয়েছি। ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে আজেবাজে পোস্ট হচ্ছে, আর সেই পোস্টের কমেন্টে আসে অকথ্য ভাষা। একজন মেয়ের আত্মহত্যা করার জন্য এই ধরনের মানসিক চাপই যথেষ্ট। এসব নোংরা মন্তব্য যখন পাবলিক প্ল্যাটফর্মে আসে, তখন লিটারেলি আমার হাত কাঁপে। আন্দোলনের পরবর্তী সময়টা আমার জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসের কিছু ইস্যুতে এখন একটা গোষ্ঠী সমন্বয়কদের খারাপভাবে ট্রিট করছে। যেন সমন্বয়ক মানেই খারাপ কিছু। অথচ আমরা সাধারণভাবেই থাকতে চাই। ভালো কিছু করতে গেলে এরকম বাধা আসবেই। যেমন ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ হয়েছিল—শান্ত ও পার্থদের বিরুদ্ধে। সেই দিন মুক্ত আহ্বান ছিল—‘চারটায় সবাই চলে আসবেন’। আমি সমন্বয়ক না হলেও যেতাম, কারণ আমার ন্যায়বোধ আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। কেউ বলেছে—‘সমন্বয়ক কেন আসবে?’ আমি কি মানুষ না? আমার হৃদয় কি কাঁপবে না? যখন দেখি আমার বান্ধবী বা ব্যাচমেট এমন ঘটনার শিকার হয়, তখন কষ্ট পাই না? এসব কিছুর জন্য আমি সবসময়ই নেগেটিভ ফিডব্যাক পেয়ে এসেছি, যা খুবই বেদনাদায়ক।
বাসস : আন্দোলনের যে কোন একটি মুহূর্ত বা ঘটনা কি শেয়ার করতে চান যা আপনাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে?
জান্নাত : ওই যে বললাম না সেদিন গেইটে একজন বাবার বয়সী লোক, পুলিশকে বলছিলেন আমার সন্তানদের মেরো না। আগে আমাকে মারো। সেই বিষয়টা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল।