শিরোনাম

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নিউইয়র্কের নব-নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের এই শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র নতুন বছরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, নতুন বছরের প্রাক্কালে মধ্যরাতে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এক বেসরকারি অনুষ্ঠানে ‘ওল্ড সিটি হল স্টেশন’ নামের একটি সাবওয়ে স্টেশনে নতুন মেয়রকে শপথ পাঠ করাবেন। তিনি মামদানির বন্ধু এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
মামদানির কার্যালয় জানিয়েছে, ভূগর্ভস্থ এই স্থানটি ‘প্রতিদিন আমাদের শহর সচল রাখেন এমন শ্রমজীবী মানুষের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের প্রতিফলন’।
দুপুরে ভারমন্টের বামপন্থী প্রবীণ সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সিটি হলের বাইরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত একটি বড় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যাপক লিঙ্কন মিচেল বলেন, একটি পাড়াভিত্তিক উদযাপন অনুষ্ঠান উৎসবের আবহ প্রতিফলিত করবে ‘তার মূল বার্তাগুলোর একটি ‘এটি একটি দারুণ শহর, এবং আমরা এখানে থাকতে ভালোবাসি’।
ঘোষিত সমাজতন্ত্রী মামদানি ৮৫ লাখ মানুষের এই মহানগরে জীবনযাত্রার অস্বাভাবিক ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
তার অন্যতম প্রধান প্রস্তাব হলো ১০ লাখেরও বেশি অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া স্থগিত রাখা। তবে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ দেখভালকারী নগর বোর্ড—যেখানে বিদায়ী মেয়র এরিক অ্যাডামসের নিয়োগপ্রাপ্তদের আধিক্য এ বিষয়ে সহায়ক হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
মামদানির অন্যান্য প্রতিশ্রুুতি- ২ লাখ সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ, সবার জন্য শিশুযত্ন সুবিধা, সরকারি মালিকানাধীন সুপারমার্কেট এবং বিনা ভাড়ার বাস- এসবের বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট করা হয়নি।
তবে মামদানির হাতে একটি বড় তাস আছে: নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুলের সঙ্গে তাঁর চমৎকার সম্পর্ক, যিনি কর বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ অনুমোদন দেন—যেগুলো মামদানি চান।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক জন কেইন বলেন, নির্বাচন শেষ হলে ‘প্রতীকী বিষয় ভোটারদের কাছে সীমিত গুরুত্বই বহন করে। তখন ফলাফল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।’
প্রত্যাশার বিপরীতে নভেম্বরের শেষদিকে ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও মামদানির বৈঠকটি ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্ত।
কেইন বলেন, মামদানি ‘বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি মিলের জায়গা খুঁজেছেন: নিউইয়র্ক সিটিকে বসবাসের জন্য আরও ভালো জায়গা করে তোলার আকাঙ্ক্ষা।’
কেইনের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প ‘যাদের তাঁর কাছে খুব বেশি প্রভাবশালী মনে হয় না, তাদের প্রতি অনেক সময় আশ্চর্যজনকভাবে বন্ধুসুলভ হতে পারেন।’
তবে ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের নিউইয়র্কে ক্রমবর্ধমান তৎপরতা উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
৩৪ বছর বয়সে মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে অন্যতম কনিষ্ঠ মেয়র। তার রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্তও সংক্ষিপ্ত। এর আগে তিনি একবারই নির্বাচিত পদে ছিলেন, স্টেট অ্যাসেম্বলির স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে।
এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তিনি অভিজ্ঞ সহকারীদের ঘিরে ধরছেন। পূর্ববর্তী মেয়রদের দপ্তর এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন থেকে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে।
মামদানি ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ শুরু করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ নির্বাচনে তাঁর জয় হলে ধনী নিউইয়র্কবাসীদের ব্যাপক প্রস্থান ঘটবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রিয়েল এস্টেট খাতের নেতারা সে দাবি নাকচ করেছেন।
ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থক হিসেবে—এবং মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় মেয়রকে ইহুদি সম্প্রদায়ের কাছে তাঁর অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্বের ধরনও আশ্বস্ত করতে হবে।
সম্প্রতি তাঁর এক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি পদত্যাগ করেন, যখন জানা যায় তিনি কয়েক বছর আগে ইহুদিবিদ্বেষী টুইট করেছিলেন।
মিচেল বলেন, ‘নিউইয়র্কের মেয়র সবসময়ই একজন সাংস্কৃতিক চরিত্র।’
মামদানি ইতোমধ্যে তার প্রজন্মের সাংস্কৃতিক রুচির কিছু দিক তুলে ধরেছেন। র্যাপ সংগীতে স্বল্প পরিসরের অংশগ্রহণ, ম্যানহাটনে ইম্প্রোভ ক্লাস করা, এবং নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষায় ‘গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হতে চাওয়া ত্রিশোর্ধ্বদের জন্য আদর্শ প্রাথমিক মানের স্যুট’ পরা।
নিউইয়র্কবাসীরা তার স্ত্রী, সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া শিল্পী রামা দুওয়াজির প্রতি তার উচ্ছ্বসিত সমর্থনও ইতিবাচকভাবে লক্ষ করেছেন।
সোশ্যাল ব্লেডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে অনুসারীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।
নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের মর্যাদাপূর্ণ ফ্যাশন ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রকাশনা ‘দ্য কাট’-এর প্রচ্ছদে তিনি সম্প্রতি নিজের পথচলার স্বাক্ষর রেখেছেন—যা শহরে নিজের জায়গা করে নিতে চাওয়া প্রতিটি তরুণ প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য।
তিনি বলেন, ‘দিনের শেষে আমি রাজনীতিক নই। আমি জেড-এর জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা হতে এখানে আছি এবং একজন শিল্পী হিসেবে যতটা সম্ভব ভালোভাবে এই ভূমিকা ব্যবহার করতে চাই।’