শিরোনাম

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রয়াত ব্রিজিত বারদোকে কীভাবে শ্রদ্ধা জানানো হবে, তা নিয়ে সোমবার ফরাসি রাজনীতিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে। পর্দার কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী পরবর্তী জীবনে তার কট্টর ডানপন্থি মতাদর্শের কারণে বিতর্ক ও একাধিক দণ্ডের মুখে পড়েছিলেন।
প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
রোববার ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে নিজের বাড়িতে ৯১ বছর বয়সে মারা যান এই চলচ্চিত্র তারকা। মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে তার আইকনিক ছবি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রকাশিত হয়।
১৯৫৬ সালের চলচ্চিত্র ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওম্যান’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে বারদো খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। এরপর প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তবে ১৯৭৩ সালে সিনেমা জগতকে বিদায় জানিয়ে প্রাণীর অধিকার রক্ষার আন্দোলনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেন।
তবে কট্টর ডানপন্থার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা বিতর্কের জন্ম দেয়।
বারদোকে পাঁচবার ঘৃণাত্মক বক্তব্যের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যার বেশিরভাগই মুসলমানদের সম্পর্কে ছিল। এছাড়া তিনি ফরাসি দ্বীপ রিইউনিয়নের বাসিন্দাদের ‘বর্বর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
রোববার ভোরের আগে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পাশে ছিলেন চতুর্থ স্বামী বার্নার্ড দ’অরমাল, যিনি কট্টর ডানপন্থার সাবেক উপদেষ্টা।
‘তিনি তাকে ভালোবাসার একটি কথা ফিসফিস করে বলেছিলেনৃ তারপর তিনি চলে গেলেন,’ প্রাণীকল্যাণে কাজ করা তার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ব্রুনো জাকেলাঁ বিএফএম টেলিভিশনকে বলেন।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বারদোকে বিংশ শতাব্দীর চলচ্চিত্রের এক ‘কিংবদন্তি’ হিসেবে আখ্যা দেন, যিনি ‘স্বাধীন জীবনের প্রতীক’ ছিলেন।
কট্টর ডানপন্থি ব্যক্তিত্বদের মধ্যেই প্রথম তাকে শোক জানানো হয়।
জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা ন্যাশনাল র্যালি দলের নেত্রী মারিন লে পেন বারদোকে ‘অবিশ্বাস্যভাবে ফরাসি: স্বাধীন, অদম্য, পূর্ণাঙ্গ’ বলে বর্ণনা করেন।
বারদো ২০১২ ও ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লে পেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং তাকে আধুনিক ‘জোয়ান অব আর্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি ফ্রান্সকে ‘রক্ষা’ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেছিলেন।
রক্ষণশীল রাজনীতিক এরিক সিওতি প্রয়াত ফরাসি রক তারকা জনি হ্যালিডের জন্য ২০২৮ সালে আয়োজিত জাতীয় বিদায়ের মতো বারদোর জন্যও রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধানুষ্ঠানের প্রস্তাব দেন।
তিনি অনলাইনে একটি পিটিশন চালু করেন, যাতে সোমবার পর্যন্ত সাত হাজারের কিছু বেশি স্বাক্ষর জমা পড়ে।
তবে বামপন্থি রাজনীতিকদের খুব কম জনই বারদোর মৃত্যু নিয়ে কথাা কথা বলেছেন।
সোশ্যালিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য ফিলিপ ব্রুন ইউরোপ-১ রেডিওকে বলেন, ‘ব্রিজিত বারদো ছিলেন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব—স্বাধীনতা, বিদ্রোহ ও আবেগের প্রতীক।’
‘আমরা তার প্রয়াণে শোকাহত,’ তিনি বলেন এবং রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা জানানোয় আপত্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন।
তবে তার বিতর্কিত রাজনৈতিক অবস্থানের দিকেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
‘তার রাজনৈতিক অঙ্গীকারগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য সামনে—আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে—যথেষ্ট সময় থাকবে,’ তিনি বলেন।
কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ফাবিয়েন রুসেল বারদোকে বিভাজন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব বলে মন্তব্য করেন।
তবে তিনি এক্সে লেখেন, ‘আমরা সবাই একমত যে ফরাসি সিনেমাই “বিবি” সৃষ্টি করেছে এবং তিনি সারা বিশ্বে একে উজ্জ্বল করে তুলেছেন।’
গ্রিনস দলের আইনপ্রণেতা সান্দ্রিন রুসো আরও কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি ব্লুস্কাইয়ে লেখেন, ‘ডলফিনের পরিণতিতে বিচলিত হওয়া, অথচ ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের মৃত্যুর বিষয়ে উদাসীন থাকা কতটা নির্মমতা?’
বারদো জানিয়েছিলেন, তিনি তার বাগানেই একটি সাধারণ কাঠের ক্রসসহ সমাহিত হতে চান—যেমনটা তার প্রাণীদের জন্য করেছিলেন—এবং নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ‘কিছু নির্বোধ মানুষের ভিড়’ এড়াতে চান।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে ফ্রান্সে এ ধরনের দাফন সম্ভব।
১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্যারিসে জন্ম নেওয়া বারদো বড় হয়েছেন স্বচ্ছল, ঐতিহ্যবাহী ক্যাথলিক পরিবারে।
চারবার বিয়ে করা এই অভিনেত্রীর একটি সন্তান রয়েছে, নিকোলা-জাক শারিয়ে, যিনি তার দ্বিতীয় স্বামী, অভিনেতা জাক শারিয়েরের সন্তান।
চলচ্চিত্রজগৎ ছাড়ার পর তিনি সাঁ-ত্রোপেজে নিজের বাড়িতে নিভৃতবাসে যান এবং প্রাণীর অধিকার রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেন।
তার এই ব্রত নাকি শুরু হয় শেষ চলচ্চিত্র ‘দ্য এডিফাইং অ্যান্ড জয়াস স্টোরি অব কলিনো’-এর শুটিং সেটে একটি ছাগলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর। সেটিতে তাকে জবাই করা হবে জেনে বারদো ছাগলটি কিনে নেন এবং নিজের হোটেল কক্ষে রাখেন।
২০২৪ সালে ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের প্রথম অধ্যায় নিয়ে আমি খুবই গর্বিত।’
‘এটি আমাকে খ্যাতি দিয়েছে, আর সেই খ্যাতিই আমাকে প্রাণীদের রক্ষা করতে সাহায্য করেছে, এটাই একমাত্র কারণ, যা সত্যিকার অর্থে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’