বাসস
  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২৭

সিরিয়ায় সংখ্যালঘু আলাওয়িদের বিক্ষোভ চলাকালে গুলিতে নিহত ৩

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পশ্চিম সিরিয়ায় আলাওয়ি সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ চলাকালে রোববার গুলিতে অন্তত তিন জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। 

হোমস শহরের একটি মসজিদে প্রাণঘাতী বোমা হামলার পর সংখ্যালঘু এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধ্যুষিত এলাকাজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

শুক্রবার হোমসে সংঘটিত মসজিদে বোমা হামলার প্রতিবাদে উপকূলীয় প্রদেশগুলো এবং মধ্য সিরিয়ায় আয়োজিত এই সব বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। 

এর আগে, মসজিদে ওই হামলায় আট জন নিহত হয়। 

এই ঘটনাগুলো ইসলামপন্থী কর্তৃপক্ষের অধীনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, আলাওয়ি সম্প্রদায় অধ্যুষিত লাতাকিয়া প্রদেশে একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুই জন নিহত হয়। 

তবে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা লাতাকিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাতে জানায়, শহরে বিক্ষোভ চলাকালে ‘সাবেক শাসন ব্যবস্থার অবশিষ্টদের হামলায়’ তিন জন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়েছে।

রোববার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। 

একটি নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে নিশ্চিত করেছে, নিহত তিন জনের মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশের জেনারেল সিকিউরিটি বাহিনীর সদস্য।

লাতাকিয়া ও উপকূলীয় শহর জাবলেহতে এএফপি প্রতিনিধিরা দেখেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নতুন ইসলামপন্থী সরকারের সমর্থকদের সংঘর্ষ ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং আকাশে গুলি ছোড়ে।

লাতাকিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল আজিজ আল-আহমাদ বলেন, ‘অজ্ঞাত উৎস থেকে সরাসরি গুলিবর্ষণের ফলে বেসামরিক মানুষ ও নিরাপত্তা সদস্যরা আহত হয়েছেন।’

পরবর্তীতে সরকারপন্থী সমর্থকদেরও ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। 

সিরিয়ান অবজারভেটরি হোমস শহরেও সহিংসতার খবর দিয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

‘নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাই’।

এই বিক্ষোভের ডাক দেন আলাওয়ি ধর্মীয় নেতা গাজাল গাজাল। শনিবার তিনি বলেন, হোমস হামলার পর ‘বিশ্বকে দেখাতে হবে যে আলাওয়ি সম্প্রদায়কে অপমান করা যাবে না।’

এদিকে, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সুন্নি উগ্রবাদী গোষ্ঠী সারায়া আনসার আল-সুন্না।

ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় সিরিয়া ও প্রবাসে ইসলামিক আলাওয়ি কাউন্সিলের প্রধান গাজাল বলেন, ‘আমরা গৃহযুদ্ধ চাই না, আমরা রাজনৈতিক ফেডারেলিজম (মৈত্রীতন্ত্র) চাই। আমরা সন্ত্রাস চাই না। আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করতে চাই।’

লাতাকিয়ায় বিক্ষোভকারীরা গাজালের ছবি বহন করে নতুন কর্তৃপক্ষের কাছে বিকেন্দ্রীকরণ ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। 

প্ল্যাকার্ডে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য বন্ধ করা এবং বেসামরিক ও সাবেক সেনাদের বেতন পরিশোধের দাবিও জানানো হয়।

৪৮ বছর বয়সী ব্যবসায়ী নুমেইর রমাদান প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন এই হত্যা? কেন এই অপহরণ? আসাদ চলে গেছে, আমরা আসাদকে সমর্থন করি না। তবুও কেন এই সহিংসতা?’

রোববার আলাওয়ি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার’ অভিযোগ তুলে সমর্থকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

সিরিয়ার অধিকাংশ মানুষ সুন্নি মুসলমান। হোমস শহরে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেখানে আলাওয়ি অধ্যুষিত এলাকাও রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে আলাওয়ি সম্প্রদায় লক্ষ্য করে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ উঠে আসছে।

চলতি বছরের মার্চে উপকূলীয় এলাকায় আলাওয়ি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটে। 

জুলাইয়ে দ্রুজ অধ্যুষিত সুইদায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় বলে জানিয়েছে অবজারভেটরি।

দামেস্ক সব সম্প্রদায়কে সুরক্ষার আশ্বাস দিলেও নতুন ইসলামপন্থী শাসনের অধীনে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ এখনও কাটেনি।