বাসস
  ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:১০

সীমান্তে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও বাড়ি ফিরতে শঙ্কিত থাই ও কাম্বোডিয়ানরা

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): কাম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘর্ষ থামাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া এক থাই বিশ্ববিদ্যালয়ে কানলায়া সোমজেত্তানা এখনও বাড়ি ফিরতে অনিচ্ছুক। তার আশঙ্কা, সহিংসতা পুরোপুরি শেষ নাও হয়ে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর রোববার কিছু মানুষ লড়াইয়ের কারণে ছেড়ে যাওয়া ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে সীমান্তের দুই পাশের বহু আশ্রয়প্রার্থী নিরাপদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

কেউ কেউ বলছেন, প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে- এমন আস্থা তাদের নেই, কারণ অতীতে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়েছে।

থাইল্যান্ডের সুরিন শহরের ওই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ২১ বছর বয়সী গৃহিণী কানলায়া এএফপিকে বলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করি এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং আমরা বাড়ি ফিরতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিরাপদ বলে নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমি বাড়ি ফিরব না।’ তিনি যোগ করেন, আশ্রয়কেন্দ্রে এখন ভিড় কমেছে, তবে এখনও সেখানে কয়েক শ মানুষ রয়ে গেছেন।

কাম্বোডিয়ার পক্ষেও একই চিত্র। ৩৫ বছর বয়সী সো চেউন বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তার সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এরপর তিনি সীমান্ত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার (০.৬ মাইল) দূরের নিজের বাড়িতে নবজাতককে নিয়ে ফিরতে চান।

তবে এখনই নয়—বান্তেয় মিয়ানচে প্রদেশের একটি বৌদ্ধ প্যাগোডায় অস্থায়ী তাবুর নিচে পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া ওই নারী এএফপিকে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও আমরা এখনও বাড়ি ফিরতে সাহস পাচ্ছি না। আমরা এখনও ভীত।’

তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন পরিস্থিতি দেখে অপেক্ষা করব—শান্ত থাকে কি না।’

উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানান, রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। তবে অধিকাংশ এলাকায় এখনও ‘সবকিছু স্বাভাবিক’—এমন ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

এই যুদ্ধবিরতি আসে সীমান্তে নতুন করে তিন সপ্তাহের সংঘর্ষের পর, যাতে অন্তত ৪৭ জন নিহত হন এবং দুই দেশের এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।

দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের আগের দফায়- জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে- ডজনখানেক মানুষ নিহত হন। তখনও যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, যা পরে ভেঙে পড়ে।

সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই জুলাইয়েও ঘরছাড়া হয়েছিলেন।

ধান ও কাসাভা চাষি সাইচন ওয়ংপিটাক বলেন, আর অপেক্ষা করার সামর্থ্য তার নেই। তিনি রোববার বিকেলে থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে নিজের বাড়িতে ফেরার পরিকল্পনা করছেন।

৩৮ বছর বয়সী সাইচন এএফপিকে বলেন, ‘আমি আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, গতকাল থেকে কোনো গুলির শব্দ নেই।’ তিনি যোগ করেন, প্রয়োজন হলে তার পরিবার আবারও আশ্রয় নেবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভয় আছেৃ কিন্তু আমাদের বাড়িতে কাজ আছে, গবাদিপশু আছে, খামার আছে।’

সাইচন জানান, যুদ্ধবিরতির খবরে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন, তবে তার প্রত্যাশা—‘কাম্বোডিয়া নতুন করে লড়াই শুরু করার আগ পর্যন্ত’ এটি বেশি দিন টিকবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি সীমান্তে থাকি, আর আমার অভিজ্ঞতা হলো- কাম্বোডিয়ার ওপর ভরসা না করা।’

যুদ্ধবিরতির আওতায় দুই দেশ গোলাবর্ষণ বন্ধ, সেনা চলাচল স্থগিত এবং সীমান্ত এলাকার বেসামরিক মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে থাইল্যান্ড জুলাইয়ে আটক ১৮ জন কাম্বোডিয়ান সেনাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।

কাম্বোডিয়ার বান্তেয় মিয়ানচের আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রের ৪৩ বছর বয়সী কট নিক বলেন, যুদ্ধবিরতির ফলে শিশুরা শিগগিরই স্কুলে ফিরতে পারবে- এই আশায় তিনি কৃতজ্ঞ।

তবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও থাই সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখছি না।’

‘এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। যে কোনো সময় আবার লড়াই শুরু হতে পারে।’

অনেক আশ্রয়প্রার্থী, কট নিকের মতো, এখনও আশ্রয় ছাড়তে খুব ভীত। তবে সো চেউন বলেন, যুদ্ধবিরতি অন্তত কিছুটা আশা জাগিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গতকাল সকালে জোরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি, কিন্তু গতকাল দুপুর ১২টার পর আর শুনিনি।’

‘এটা ভালো লক্ষণ।’