শিরোনাম

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : দৌড়ানোর সময় ঘন ধোঁয়াশায় শ্বাসকষ্টে পড়া এক অর্থ বিশেষজ্ঞ ও সন্তানের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এক চিকিৎসক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও থাইল্যান্ডে বায়ুদূষণবিরোধী ঐতিহাসিক আইন প্রণয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের মতো করে কর্মীরাও এই আইন প্রনয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যাংকক থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
প্রতি শীতে থাইল্যান্ডের বড় একটি অংশ ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে যায়।
আবহাওয়ার ধরন, মৌসুমি ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার নির্গমনের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সমস্যা মোকাবিলায় বহু বছরের উদ্যোগ বাড়ি থেকে কাজের নীতি কিংবা খড়কুটো পোড়ানোর ওপর বিধিনিষেধ—বাস্তবে খুব একটা ফল দেয়নি।
তবে এবার আশার আলো দেখাচ্ছে ‘ক্লিন এয়ার’ বিল। এই আইনে শ্বাস নেওয়ার উপযোগী বাতাসের অধিকার নিশ্চিত করা, দূষণকারীদের ওপর কর আরোপ এবং দূষণের উৎস সম্পর্কে জনসাধারণকে তথ্য দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
থাইল্যান্ড ক্লিন এয়ার নেটওয়ার্কের (ক্যান) পক্ষ থেকে এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়া উইরুন লিমসাওয়ার্ট দক্ষিণাঞ্চলীয় নাখোন সি থাম্মারাটে বড় হয়েছেন।
তবে এক দশক বিদেশে থাকার পর ২০১৮ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি প্রথমবারের মতো দেশের বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেন।
তখন থেকেই তার তিন সন্তানের ওপর দূষিত বাতাসের প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘এতে একজন নৃতত্ত্ববিদ ও একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আমি কী করতে পারি?’
এক দর্জি মা ও এক মেকানিক বাবার সন্তান উইরুন ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তিনি থাইল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় একটি মেডিকেল স্কুলে পড়াশোনা করেন।
৪৯ বছর বয়সী উইরুন বলেন, ‘আমার বাবা-মা তাঁদের কাজে অন্যদের জন্য আন্তরিকভাবে ভাবার মানে আমাকে শিখিয়েছেন। সেটা আমার ভেতরে গেঁথে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এমন পেশা বেছে নিয়েছি, যাতে মানুষকে সাহায্য করতে পারি।’ তার জীবন জুড়ে রয়েছে অসুস্থতার অভিজ্ঞতা। বিশের গোড়ার দিকে তিনি একদিন বাসে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। কেমোথেরাপি ও বছরের পর বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে রোগীদের আরও গভীরভাবে বোঝার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে।
তিনি বলেন, একজন চিকিৎসকের দৃষ্টিকোণ থেকে রোগীদের সত্যিকার অর্থে বুঝতে চেয়েছিলাম। তবে একসময় আমার আমি নিজেই রোগী হয়ে যাই।
থাইল্যান্ডের দরিদ্র ও দুর্গম এলাকায় আট বছর সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার পর তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে তিনি জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নৃতত্ত্বভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। চিকিৎসা গবেষণা ও মানব আচরণ বিশ্লেষণ—দু’টিই তার কাজের অংশ।
দূষণ নিয়ে উদ্বেগ থেকেই ২০১৯ সালে ব্যাংককে এক আলোচনা সভায় অংশ নেন উইরুন। সেখানকার কথাবার্তাই পরে রূপ নেয় ক্যান সংগঠনে। কয়েক বছর ধরে সংগঠনটি নির্মল বাতাস আইন এগিয়ে নিতে কাজ করছে।
২০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের দাবির পক্ষে সমর্থন জানায়। এতে জনগণের উদ্যোগে আইনের প্রস্তাব আনার প্রয়োজনীয় সীমা অতিক্রম করে। গত অক্টোবরে বিলটির খসড়া থাই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাসও হয়।
উইরুন বলেন, ‘দূষণকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
তবে, চলতি মাসে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় বিলটি আপাতত স্থগিত হয়ে গেছে।