শিরোনাম

ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সৌদি আরব শনিবার ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীগুলোকে সাম্প্রতিক দখলকৃত প্রদেশগুলো থেকে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেছে যে, প্রয়োজনে তারা যেকোনো সামরিক সংঘাতে ইয়েমেন সরকারের পাশে থাকবে।
রিয়াদ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এই বক্তব্য আসে ইয়েমেনের হাজরামউত প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থানে সৌদি বিমান হামলার খবরের এক দিন পর এবং সংঘাত দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করায় যুক্তরাষ্ট্র সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর পর।
রিয়াদ-নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র জেনারেল তুর্কি আল-মালিকি সৌদি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএকে বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষায় তারা ‘উপযুক্ত সময়ে সরাসরি ব্যবস্থা’ নেবে।
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) বাহিনীর উচিত সরকারের কাছে দুইটি আঞ্চলিক গভর্নরেট ‘শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর’ করা। তিনি লেখেন, ‘এই সংবেদনশীল সময়ে যুক্তিবোধকে প্রাধান্য দিয়ে দুই প্রদেশ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সরে যাওয়ার এটাই সময়।’
এর আগে শুক্রবার এসটিসি জানায়, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে দায় চাপানো বিমান হামলার পরও তারা নিরুৎসাহিত হয়নি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা হাদরামাউত ও মাহরাহ প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নেয়। হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট এবং সাবেক স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন রাষ্ট্র পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কাজ করা এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের প্রধান মিত্র সৌদি আরব বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারেয়া আল-মুসলিমি এএফপিকে বলেন, এসটিসি রিয়াদের ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে এবং পরিস্থিতি দ্রুত আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।
এদিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমরা সংযম ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে একটি টেকসই সমাধানে পৌঁছানো যায়।’
শুক্রবারের হামলার পর ইয়েমেন সরকার হাদরামাউতে তাদের বাহিনীকে সমর্থন দিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি আহ্বান জানায়। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা জানায়, সরকার জোটকে ‘নিরীহ ইয়েমেনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তায় সব প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার’ অনুরোধ করেছে।
ইয়েমেনি এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ১৫ হাজার সৌদি সমর্থিত যোদ্ধা সীমান্তের কাছে অবস্থান নিলেও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ তারা এখনো পাননি।
সাম্প্রতিক সময়ে এসটিসির অগ্রযাত্রা ইয়েমেন সংকটে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি করেছে, কারণ তারা সরকারের ভেতর ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। যদিও ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরোধিতায় এসব গোষ্ঠী একসঙ্গে রয়েছে।
২০১৪ সালে হুথিরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নেয় এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
শুক্রবার এসটিসি এএফপিকে জানায়, সৌদি আরব দুই দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী-ঘনিষ্ঠ একটি গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে মরুভূমিতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী ও সৌদি-ঘনিষ্ঠ এক গোত্রপ্রধানের মধ্যে সংঘর্ষে এসটিসির দুই যোদ্ধা নিহত হয় বলে তারা দাবি করেছে।
শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে নিরাপত্তা জোরদারে সৌদি প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়। ভিন্ন পক্ষ সমর্থন করলেও উপসাগরীয় দুই মিত্র ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করছে।