শিরোনাম

ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের উত্তরাঞ্চলে অস্থায়ী এক শিবিরে নিজের গাধাটিকে সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন আমানি আবদ্রামানে। সেখানেই তিনি এখন বসবাস করছেন।
দেশটির সাহেল সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলে সূর্যের তাপ তীব্র। বালু গ্রাস করেছে উদ্ভিদের শেষ চিহ্নগুলোও।
১৮ বছর বয়সী আবদ্রামানে মাথা ও কাঁধ ঢেকে রাখা গোলাপি ওড়নাটি ঠিক করে নিলেন। ভাবছিলেন, রোববারের সাধারণ নির্বাচন থেকে তিনি কী প্রত্যাশা করেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য এবং নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। বিরাও থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমি আশা করি, যাকে ভোট দেব তিনি শান্তি নিয়ে আসবেন।
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সাতজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফস্টিন-আর্শাঞ্জ তুয়াদেরাও আছেন। তিনি টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য লড়ছেন।
দশকের পর দশক ধরে চলা সংঘাতে বাস্তুচ্যুত আবদ্রামানের মতো তরুণরা, যারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিরাও শহরের আশপাশের শিবিরে থাকেন, এই নির্বাচনকে দেখছেন ভালো ভবিষ্যতের সুযোগ হিসেবে।
২০১৫ সালে জাতিগত সহিংসতার কারণে আবদ্রামানে তার মা ও আট ভাইবোনকে নিয়ে নিজ গ্রাম সিসি থেকে পালিয়ে আসেন। গ্রামটি বিরাও থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে। তার বাবা কয়েক মাস আগেই নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু চাই, আমার ভাইবোনেরা আর আমি যেন স্কুলে যেতে পারি।’
আট বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই আবদ্রামানের পরিবারকে পালাতে হয়। এরপর আর স্কুলে ফেরা হয়নি তার।
এখন তিনি ও তার মতো আরো তরুণরা আশা করছেন, নির্বাচন তাদের শান্তি, শিক্ষা ও বাস্তুচ্যুত জীবনের বাইরে নতুন সুযোগ এনে দেবে।
এর আগে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালে। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে তখন অনেক যোগ্য ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
বিরাওয়ের কোরসি এলাকার কমিউনিটি রেডিও স্টেশনের সামনে ভিড় দেখা যায়। এটি ভোটার নিবন্ধন কার্ড বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৮ বছর বয়সী মারিনা হাজরাম প্রথমবার ভোট দেবেন।
ভোটার কার্ড হাতে ধরে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমি খুব খুশি।’
তার পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ২৫ বছর বয়সী ইসা আবদুল বলেন, দেশের পুনর্গঠন অব্যাহত রাখতে নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
কোরসি এলাকায় হাজারো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ বাস করেন। পাশাপাশি প্রতিবেশী সুদান থেকে আসা বহু শরণার্থীও সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
নভেম্বর পর্যন্ত মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১৬ হাজার। তাদের অধিকাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এ সপ্তাহের শেষে তাদের অনেকেই প্রথমবার ভোট দেবেন।
তাদের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্ড পাওয়াটাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রথমে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। কিন্তু পালিয়ে আসার সময় অনেকেই সবকিছু হারিয়েছেন। যাদের পরিচয়পত্র ছিল, সেগুলোও হারিয়ে গেছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে।
এই তরুণদের সবচেয়ে বড় চাওয়া শান্তি।
দেশের অনেক এলাকায়, বিশেষ করে শহরগুলোয় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা এখনও চলছেই। অঞ্চলটি দুই সুদানের সীমান্তে অবস্থিত।
মূলত সুদানি সশস্ত্র বাহিনীর অনুপ্রবেশের কারণে সেখানে উত্তেজনা রয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দায়ে চলা নির্যাতনের পাশাপাশি এই অঞ্চল ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত।
২৩ বছর বয়সী ইসেনে আবদুলকাসিম মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছেন।
এখন তিনি দর্জি হতে চান। লক্ষ্য, আয় করে আবার পড়াশোনা শুরু করা।
তিনি বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করতে চাই, যাতে একদিন সংসদ সদস্য হতে পারি। কারণ, এমপি হলে আমি শান্তি ও উন্নয়ন আনতে পারব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সংঘাত, উত্তেজনা এবং আমাদের দেশ ধ্বংস করছে—এমন সব কিছুর অবসান চাই।’