বাসস
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩

সৌদি হামলায় দমে না যাওয়ার ঘোষণা ইয়েমেনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের

ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জানিয়েছে, তাদের অবস্থানে সৌদি আরবের বিমান হামলায় তারা মোটেও দমে যায়নি। গত মাসে বিশাল এলাকা দখলের পর শুক্রবার এই হামলার মাধ্যমে দুই পক্ষের উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছালো।

আল মুখাল্লা থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দক্ষিণ ইয়েমেনকে আবারও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। গত কয়েক সপ্তাহে তারা বেশ কিছু এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেন সরকারের প্রধান সমর্থক ও আঞ্চলিক পরাশক্তি সৌদি আরব তাদের পিছু হঠার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। তবে হাজরামাউত প্রদেশে চালানো এই বিমান হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ ইয়েমেনকে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) জানায়, এই হামলা সমঝোতার কোনো পথ তৈরি করবে না। বরং দক্ষিণের জনগণ তাদের পূর্ণ অধিকার আদায়ে এগিয়ে যাবে।

এদিকে হামলার পর ইয়েমেন সরকার সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে হাজরামাউত প্রদেশে তাদের বাহিনীকে সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দেশটির এই বৃহত্তম প্রদেশের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেওয়ার পর সরকার এই আবেদন জানায়। 

ইয়েমেনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সাবা জানিয়েছে, নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা এবং অস্ত্রবিরতি কার্যকরে সামরিক পদক্ষেপ নিতে জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

রিয়াদে অবস্থানরত ইয়েমেন সরকারের একজন কর্মকর্তা এএফপি-কে জানান, আলোচনা ব্যর্থ হলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সৌদি আরব। 

অন্য এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, সৌদি সীমান্তের কাছে প্রায় ১৫ হাজার যোদ্ধা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তাদের এখনও অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই অগ্রযাত্রা সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মধ্যকার সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি করেছে। দুই দেশই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের অংশ হলেও তারা সেখানে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। 

এই সরকার মূলত বিভিন্ন পক্ষের একটি জোট, যারা কেবল ইরান সমর্থিত হুথিদের বিরোধিতার খাতিরে এক হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই দ্বন্দ্বে কোনো নির্দিষ্ট পক্ষ না নিয়ে সংযম ও কূটনীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি এক বিবৃতিতে স্থায়ী সমাধানের ওপর জোর দেন এবং সৌদি ও আমিরাতের কূটনৈতিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

এসটিসি জানায়, সৌদি আরব দু’টি বিমান হামলা চালিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে মরুভূমি থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। তবে সৌদি জোট এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সৌদি ঘনিষ্ঠ এক উপজাতীয় নেতার বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষে এসটিসি’র দুই যোদ্ধা নিহত হয়। সংঘর্ষের পর ওই উপজাতীয় নেতা দেশ ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

রিয়াদে অবস্থানরত ইয়েমেন সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এএফপি-কে জানিয়েছেন, সংকট নিরসনে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল। কাউন্সিলের প্রধান ইতোমধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।

একই সঙ্গে, একটি বিশেষ প্রতিনিধি দলকে এডেনে পাঠানো হয়েছে। এই দলটির মূল লক্ষ্য হলো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে (এসটিসি) বুঝিয়ে হাজরামাউত ও মাহরা প্রদেশ থেকে তাদের সেনা সরিয়ে নিতে রাজি করানো।

এর আগে, চলতি মাসের শুরুতে সৌদি ও আমিরাতি প্রতিনিধি দল এডেন সফর করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাজরামাউত ও মাহরা প্রদেশ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

রিয়াদ জানায়, পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা এখনও চলছে। তবে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সৌদি আরব বিমান হামলা এবং তাদের সমর্থিত সালাফি গোষ্ঠী ‘নেশন শিল্ড’ বাহিনীকে স্থল অভিযানে নামানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।

শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে নিরাপত্তা বজায় রাখতে সৌদির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে। লড়াইয়ে ভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিলেও দুই উপসাগরীয় মিত্র এখন একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।

২০১৪ সালে হুথিরা রাজধানী সানা থেকে সরকারকে হঠিয়ে উত্তর ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ২০১৫ সাল থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সমর্থনে সরকারি বাহিনী হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এই দীর্ঘ লড়াইয়ে কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ২০২২ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংঘাত কিছুটা কমে এসেছিল।