শিরোনাম

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মালয়েশিয়ার বহুল আলোচিত ‘১এমডিবি’ তহবিল কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার রায়ের মুখোমুখি হচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে বর্তমানে ভোগ করা সাজার পাশাপাশি তাকে আরও দীর্ঘ সময় কারাভোগ করতে হতে পারে।
মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়া থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
৭২ বছর বয়সী নাজিবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি এবং অর্থপাচারের ২১টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশটির রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ‘১এমডিবি’ থেকে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। এই বিশাল অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তদন্ত চলছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ১এমডিবি সংশ্লিষ্ট অন্য একটি মামলায় ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে বিচারক কলিন লরেন্স সিকেরাহ রায় পড়া শুরু করেন। দীর্ঘ রায় হওয়ার কারণে জুমার নামাজের বিরতি দিয়ে বিকেল ৩টায় পুনরায় শুনানি শুরুর কথা রয়েছে।
রায়ের পরপরই সাজা ঘোষণা করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে এই মামলায় খালাস পেলেও নাজিবকে কারাগারে ফিরে আগের সাজা ভোগ শেষ করতে হবে।
সকালে শুনানিতে নাজিবের আইনজীবীরা দাবি করেন, নাজিব তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রহস্যময় ব্যবসায়ী লো টেক জো-এর (জো লো) প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তবে বিচারক সিকেরাহ এই যুক্তি নাকচ করে দিয়ে বলেন, প্রমাণ বলছে জো লো আসলে নাজিবের প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করতেন। নাজিব বিভ্রান্ত বা প্রতারিত হয়েছেন, এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
পলাতক জো লো’কে এই অর্থ লুটের মূল কারিগর মনে করা হয়। অভিযোগ আছে, লুটের টাকায় দামি হীরা-জহরত, বিলাসবহুল সম্পত্তি এবং মনেট ও ভ্যান গগের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের চিত্রকর্ম কেনা হয়েছে। এছাড়া নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে আসা অর্থকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘অনুদান’ হিসেবে চালানোর চেষ্টাও আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিচারক একে ‘আরব্য রজনীর গল্পকেও হার মানানো কাহিনী’ বলে মন্তব্য করেন।
প্রসিকিউটরদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নাজিব ‘১এমডিবি’ তহবিলের প্রায় ৫৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার (২২৮ কোটি রিঙ্গিত) নিজের ব্যক্তিগত হিসাবে সরিয়ে নেন। এই মামলায় ৫০ জনেরও বেশি সাক্ষী ও প্রচুর নথিপত্র আদালতে জমা উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর আহমদ আক্রম গারিব বলেন, নাজিব নিজেকে অসহায় হিসেবে তুলে ধরলেও বাস্তবে সব ক্ষমতা তার হাতেই ছিল।
তিনি আরও বলেন, আসামির হাতেই ছিল পূর্ণ আর্থিক, নির্বাহী ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ।
নাজিব অবশ্য তার মেয়াদে ঘটে যাওয়া এই কেলেঙ্কারির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তিনি বরাবরই দাবি করে আসছেন যে অবৈধভাবে অর্থ সরানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এদিকে গত সোমবার তার সাজা বাড়িতে কাটানোর আবেদনটিও আদালত নাকচ করে দেন।
আইন অনুযায়ী, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিটি অভিযোগে নাজিবের সর্বোচ্চ ২০ বছরের জেল এবং হাতিয়ে নেওয়া অর্থের পাঁচ গুণ জরিমানা হতে পারে।