বাসস
  ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৪৪

নাইজেরিয়ায় বড়দিনে আইএসের আস্তানায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের আস্তানায় বৃহস্পতিবার প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী।

নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর যেকোনো পরিকল্পিত হামলার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের দেওয়া সতর্কবার্তার কয়েক সপ্তাহ পরই এই অভিযান চালানো হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের পাম বিচ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ভোরে বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তারা একে দেশে ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত’ বলে উল্লেখ করে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ভোরে এই বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে একে ‘সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত’ বলে অভিহিত করেছে। 

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের আফ্রিকা কমান্ড জানিয়েছে, নাইজেরিয়া কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সোকোটো অঙ্গরাজ্যে এই অভিযান চালানো হয়। এতে ‘একাধিক আইএস জঙ্গি’ নিহত হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

ট্রাম্প জানান, বড়দিনের উৎসবেই আইএসের আস্তানায় এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, তিনি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলেন। 

তিনি বলেন, খ্রিস্টানদের হত্যা বন্ধ না করলে তাদের ‘চরম পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। 

ট্রাম্প লেখেন, ‘আজ রাতে সেটাই ঘটেছে। আমাদের সামরিক বাহিনীকে ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা, নিহত সন্ত্রাসীদেরও। তবে খ্রিস্টানদের হত্যা চলতে থাকলে এই সংখ্যা (নিহত জঙ্গির সংখ্যা) আরও বাড়বে।’

ট্রাম্পের অধীনে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর এটিই প্রথম হামলা। এর আগে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে তিনি পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির কড়া সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, সেখানে সশস্ত্র সংঘাতের ফলে খ্রিস্টানরা ‘অস্তিত্বের সংকটে’ পড়েছে যা ‘গণহত্যার শামিল’।

ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ একে স্বাগত জানালেও বিশ্লেষকদের মতে, এতে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটিতে ধর্মীয় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। নাইজেরিয়া সরকার অবশ্য দেশটিতে চলমান সহিংসতাকে কেবল ধর্মীয় নিপীড়ন হিসেবে দেখতে রাজি নয়। তবে গত মাসেই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মোকাবিলায় ওয়াশিংটন প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নিয়ে নাইজেরিয়ায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

এদিকে, নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা সন্ত্রাসবাদ দমনে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। 

শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পেন্টাগন প্রধান পিট হেগসেথ এক পোস্টে নাইজেরিয়া সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, এ বছর যুক্তরাষ্ট্র আবারও নাইজেরিয়াকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘উদ্বেগজনক’ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং নাইজেরীয়দের ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। গত মাসেই ট্রাম্প খ্রিস্টানদের ওপর হামলা বন্ধ না হলে আবুজাকে দেওয়া সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

মূলত নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল মুসলিম এবং দক্ষিণাঞ্চল খ্রিস্টান অধ্যুষিত। গত ১৫ বছর ধরে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল বোকো হারাম ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সহিংসতার কবলে রয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত বুধবারও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাইদুগুরির একটি মসজিদে বিস্ফোরণে সাতজন মুসল্লি নিহত হন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।