বাসস
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৩

যুদ্ধের আশঙ্কায় কাঁপছে দেশ, বড়দিনের আনন্দে স্বস্তি খুঁজছে ভেনেজুয়েলাবাসী

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানী কারাকাসের একটি আলোকোজ্জ্বল রাস্তায় বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা আর হাসিতে মেতেছেন মারিয়া আব্রু। ১৮ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে মনটা সরাতেই তিনি এখানে এসেছেন।

কারাকাস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

কয়েক দশকের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সংকট ভেনেজুয়েলার মানুষের গা সওয়া হয়ে গেছে। উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তার গ্রাস থেকে বাঁচতে এড়িয়ে চলার কৌশলটি তারা বেশ ভালোই রপ্ত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে মারিয়া এএফপি-কে বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে আর ভাবতে চাই না। যা ঘটার ঘটুক, আমরা তো দিন আনি দিন খাই।’

কয়েক মাস ধরে এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে ভেনেজুয়েলাবাসীর। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন নৌবাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার পর এখন তারা ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাঙ্কারও জব্দ করছে। এই অবরোধে এরই মধ্যে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

ভেনেজুয়েলার নেতা নিকোলাস মাদুরোর দাবি, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই যুক্তরাষ্ট্র এই পায়তারা করছে। সাধারণ মানুষের মনে ভয়, হয়তো যেকোনো সময় আকাশপথে হামলা বা আগ্রাসন শুরু হবে। ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর গ্রেফতারের ভয়ে মানুষ এখন এসব নিয়ে কেবল ফিসফিস করে কথা বলে।

জনগণের ‘সুখী হওয়ার অধিকার’ রক্ষার দোহাই দিয়ে গত অক্টোবর মাসেই বড়দিনের উৎসব শুরু করে দেন মাদুরো। প্রায়ই তিনি দেশবাসীকে ‘পার্টি’ করার আহ্বান জানান। সরকারি টিভিতে তাকে নিয়মিত নাচতেও দেখা যায়।

কারাকাসের ‘পাসিও লস প্রসেরেস’ স্মৃতিসৌধটি এখন আলোর বন্যায় ভাসছে। উৎসবের এই চাকচিক্য দেখলে বোঝার উপায় নেই যে দেশটির সিংহভাগ এলাকা প্রতিদিন ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অন্ধকারে ডুবে থাকে। সেখানে কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা সন্তানদের নিয়ে খেলাধুলা করছেন।

বিপণিবিতানগুলোতেও উপচে পড়া ভিড়। তবে আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে দোকানপাটে পণ্য ঠাসা থাকলেও সাধারণ মানুষের পকেট প্রায় শূন্য। তাই কেনাকাটার চেয়ে চোখ বুলিয়েই বেশি আনন্দ নিচ্ছেন তারা।

মনোবিজ্ঞানী ইয়োরেলিস অ্যাকোস্তা মনে করেন, এই দীর্ঘস্থায়ী সংকট মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অনিদ্রা, অবসাদ আর উদ্বেগের কারণে মানুষ এখন ‘সবকিছু নিরুপায়ভাবে মেনে নেওয়া’কে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে।

নগরীর একটি বেসবল স্টেডিয়াম এখন দর্শকে ঠাসা। খেলা দেখতে আসা ৫২ বছর বয়সী দোকানদার মাগদা অ্যাকোস্তা বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো নয়, না অর্থনীতি, না সমাজ ব্যবস্থা। কিন্তু এখানে এলে সব ভুলে থাকা যায়। বেঁচে থাকার জন্য মাঝে মাঝে এমন দূরে সরে থাকা প্রয়োজন।’

মাঠে খেলা চললেও রাজনীতি কিন্তু মানুষের পিছু ছাড়ছে না। ৬৬ বছর বয়সী দর্শক লুইস এনরিক আলবারান মার্কিন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। তার মতে, ভেনেজুয়েলার সম্পদ কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার ওয়াশিংটনের নেই।

অন্যদিকে কার্লেইমি গঞ্জালেজ নামে ৩৮ বছর বয়সী এক নারী নিজের উদ্বেগ সামলাচ্ছেন ভাগ্যের ওপর ভরসা করে। তার মতে, সৃষ্টিকর্তা যা করবেন তা-ই হবে।