শিরোনাম

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনার এক বছর পরও উত্তর খুঁজছেন নিহতদের স্বজনরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মুয়ান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সত্য জানার আশায় প্রতি সপ্তাহে সেই বিমানবন্দরে যান শোকার্ত মা লি হিয়ো-ইউন। গত বছর থাইল্যান্ড থেকে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় জেজু এয়ারের ফ্লাইট ২২১৬ একটি পাখির ঝাঁকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এরপর জরুরি অবস্থায় চাকা ছাড়াই অবতরণ করতে গিয়ে রানওয়ের শেষ প্রান্তের একটি স্থাপনায় আঘাত লেগে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
সেখানে লি হিয়ো-ইউনের মেয়ে ও আরো ১৭৮ জন প্রাণ হারান। পিছনের অংশে বসা মাত্র দুইজন কেবিন ক্রু প্রাণে বেঁচে যান। সেই দিনের কথা আজও স্পষ্ট মনে আছে লি’র।
তার মেয়ে ইয়ে-ওন ছিলেন সেলো (বাদ্যযন্ত্র বিশেষ) প্রশিক্ষক। ব্যাংককে ছুটি কাটিয়ে ফিরছিলেন। কিছুদিন আগেই তিনি জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন।
মেয়ে বাড়িতে ফেরার আনন্দে নৈশভোজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লি। ঠিক তখনই তার বোন ফোন করে জানতে চান, ইয়ে-ওন বিমান থেকে নেমেছে কি না।
এরপর যা ঘটে, তা ছিল ‘অবিশ্বাস্য’, বলেছেন লি।
লি বলেন, ‘মাত্র ২৪ বছর বয়সে, যেটা জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সেরা সময়, সেই সময়েই সে চলে গেল।’
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বরের দুর্ঘটনার ব্যাখ্যায় সরকারি তদন্তে পাইলটের ভুলের কথা বলা হয়েছে। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও লি ও অন্যান্য স্বজনরা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের ব্যাপক সন্দেহ জানিয়েছেন।
তাদের প্রশ্ন আন্তর্জাতিক বিমান নিরাপত্তা নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কেন রানওয়ের শেষে কংক্রিটের একটি ব্লক ছিল? তারা এখনো এ প্রশ্নের জবাব পাননি।
দুর্ঘটনার পর থেকে নিহতদের পরিবারগুলো দিন-রাত কাটাচ্ছেন বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ থাকা মুয়ান বিমানবন্দরে। দ্বিতীয় তলার প্রস্থান টার্মিনালে টানানো তাঁবুর ভেতরে ও আশপাশে অবস্থান করছেন তারা।
নিহতদের স্মরণে নীল ফিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে বিমানবন্দর। সিঁড়ির দেয়ালে ঝুলছে তাদের স্মরণে লেখা চিঠি।
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সরঞ্জাম এখনো রানওয়ের শেষ প্রান্তে পড়ে আছে। কাছের একটি মাঠে ছড়িয়ে রয়েছে কংক্রিটের স্ল্যাব ও স্তম্ভের ভাঙা অংশ।
পার্ক ইন-উক জানান, বিমানবন্দরে নিয়মিত ফিরে আসা বেশ ক’জন স্বজনের মধ্যে তিনি পরিচিত মুখ। ওই দুর্ঘটনায় তিনি স্ত্রী, মেয়ে, জামাতা ও দুই নাতি-নাতনিসহ মোট পাঁচজনকে হারিয়েছেন। ৭০ বছর বয়সী পার্ক বলেন, ‘প্রথম কয়েক দিন মনে হয়েছিল আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি।’
জুলাইয়ে প্রকাশিত অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বজনদের ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার সময় পাইলট তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত বাম ইঞ্জিনটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে রানওয়ের শেষে অ্যান্টেনা লোকালাইজার রাখার কংক্রিট কাঠামো নিয়ে প্রতিবেদনে কিছুই বলা হয়নি।
আন্তর্জাতিক বিমান নিরাপত্তা নির্দেশনায় বলা আছে, এমন নেভিগেশন কাঠামো ভঙ্গুর বা সহজে ভেঙে যায় এমন উপকরণে তৈরি হওয়া উচিত। তবে মুয়ান বিমানবন্দরে সেই নির্দেশনা মানা হয়নি।
দুর্ঘটনায় বাবা-মা দু’জনকেই হারানো ৪৩ বছর বয়সী কো জে-সুং বলেন, জুলাইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনটিতে দুর্ঘটনার দায় মূলত পাইলটের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্তের কাজ কাউকে দোষী করা নয়। বরং সেই ব্যবস্থাগুলো খতিয়ে দেখা, যেগুলো দুর্ঘটনার কারণ।