শিরোনাম

ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত সন্দেহে ক্যারিবীয় সাগরে ভেনিজুয়েলার আরেকটি করা তেল ট্যাংকারের পেছনে ধাওয়া করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড। রোববার একজন মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ভেনিজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতকে লক্ষ্যবস্তু করে চাপ আরো বাড়ানোর মধ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
গত দুই সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন কোস্ট গার্ড ভেনিজুয়েলার উপকূলের কাছে দ্বিতীয় একটি জাহাজ জব্দ করার একদিন পরেই ক্যারিবীয় সাগরে আটকের জন্য এই ধাওয়া শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৬ ডিসেম্বর ভেনেজুয়েলা থেকে আসাু-যাওয়া করা ‘নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের’ ওপর অবরোধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
এ ছাড়া মাদক পাচার দমনের ঘোষিত মিশনের অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বড় ধরনের নৌবহর মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। তবে কারাকাসের অভিযোগ, এটি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চাপ দেওয়ার কৌশলের অংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ভেনিজুয়েলার অবৈধ নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সঙ্গে জড়িত একটি নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ‘ডার্ক ফ্লিট’ জাহাজের পেছনে সক্রিয়ভাবে ধাওয়া করছে। জাহাজটি ভুয়া পতাকা ব্যবহার করছে এবং বিচারিক জব্দের আদেশের আওতায় রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জাহাজটির নাম ‘বেলা ১’। এটি একটি তেল ট্যাংকার, ২০২৪ সাল থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা আছে।
বিশেষায়িত ওয়েবসাইট ট্যাংকার ট্র্যাকার্স জানায়, জাহাজটি ভেনিজুয়েলার দিকে যাচ্ছিল। তবে এতে কোনো পণ্য ছিল না।
নাম প্রকাশ না করা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে মার্কিন বাহিনী জাহাজটির কাছে পৌঁছায়। কিন্তু জাহাজটি তল্লাশির জন্য থামেনি এবং যাত্রা অব্যাহত রাখে।
এর আগে শনিবারই যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ‘সেঞ্চুরিজ’ নামের আরেকটি ট্যাংকার জব্দ করে। ট্যাংকার ট্র্যাকার্সের তথ্য অনুযায়ী, এটি চীনা মালিকানাধীন ও পানামার পতাকাবাহী জাহাজ।
ওয়েবসাইটটি জানায়, চলতি মাসের শুরুতে ভেনিজুয়েলার একটি বন্দরে জাহাজটিতে ১৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল তোলা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর ভেনিজুয়েলার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে জাহাজটিকে বহির্গমনের সময় পাহারা দেওয়া হয়।
এএফপির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ‘সেঞ্চুরিজ’ জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের তালিকায় নেই।
ভেনিজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানান, তেল কোম্পানি শেভরন ভেনিজুয়েলার তেল বহন করে কারাকাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে একটি ট্যাংকার পাঠিয়েছে। তবে ওয়াশিংটনের জব্দ করা কোনো জাহাজের বিষয়ে তিনি কোনো উল্লেখ করেননি।
টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় রদ্রিগেজ বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানি শেভরনের একটি জাহাজ আমাদের দেশ থেকে ভেনিজুয়েলার তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা হয়েছে। সব বিধিবিধান কঠোরভাবে মেনে ও আমাদের তেল শিল্পের নেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই চালান পাঠানো হয়েছে।’
চলতি বছর শেভরন ভেনিজুয়েলা থেকে অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের লাইসেন্স নবায়ন করেছে। দেশটির মোট তেল উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ আসে এই কোম্পানির মাধ্যমে।
রদ্রিগেজ আরো বলেন, ‘ভেনিজুয়েলা সবসময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল ও ভবিষ্যতেও থাকবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভেনিজুয়েলা তার প্রধান সম্পদ তেল ব্যবহার করে ‘নার্কো-সন্ত্রাসবাদে’ অর্থায়ন করছে।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা নৌযানের ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে।
সমালোচকেরা এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
কারাকাস মাদক পাচারের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ভেনিজুয়েলার তেল মজুদ দখলের লক্ষ্যেই ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়।