শিরোনাম

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সকল সম্ভাবনা রোববার নাকচ করে দিয়েছে ক্রেমলিন। যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে কূটনীতিকরা মায়ামিতে জড়ো হয়েছেন, এমন সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বক্তব্য এলো।
মায়ামি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এর আগে শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, ওয়াশিংটন এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে। এমনটি হলে গত ছয় মাসের মধ্যে এই প্রথম মস্কো ও কিয়েভ মুখোমুখি আলোচনায় বসত। তবে এই বৈঠক থেকে বড় কোনো সুফল আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি।
রুশ সংবাদ সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে এই উদ্যোগ নিয়ে কেউ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেনি। আমার জানা মতে, এমন কোনো বৈঠকের প্রস্তুতিও চলছে না।’
শনিবার জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবের কথা জানানোর সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ থেকে নতুন কিছু পাওয়ার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।’ একইসঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বানও জানান।
তবে রোববার কিছুটা ইতিবাচক সুরে জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা বেশ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘রাশিয়া সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে চায় কি না তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জেলেনস্কি লিখেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত রাশিয়ার দিক থেকে নেতিবাচক সংকেতই আসছে। ফ্রন্টলাইনে হামলা চলছে, সীমান্ত এলাকায় রুশ যুদ্ধাপরাধ এবং আমাদের অবকাঠামোতে অবিরাম হামলা অব্যাহত রয়েছে।’
শনিবার রুশ প্রতিনিধি কিরিল দিমিত্রিভ মায়ামিতে পৌঁছেছেন। সেখানে গত শুক্রবার থেকেই ইউক্রেন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা অবস্থান করছেন। এই আলোচনার মধ্যস্থতা করছেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
উশাকভ জানান, দিমিত্রিভ মস্কোতে ফিরে রিপোর্ট পেশ করবেন এবং এরপর রাশিয়া পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবে।
এ ক্রেমলিন উপদেষ্টা আরও জানান, যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সংশোধিত প্রস্তাবটি তিনি এখনও দেখেননি।
গত মাসে সংঘাত নিরসনে ২৮ দফার একটি পরিকল্পনা পেশ করে ওয়াশিংটন। তবে সেটি রাশিয়ার স্বার্থের অনুকূলে বলে মনে করায় ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা বিস্মিত হয়। পরবর্তীতে কিয়েভ ও ইউরোপের আপত্তির মুখে তা সংশোধন করা হয়।
সবশেষ সংশোধিত প্রস্তাবে কী আছে তা এখনও অস্পষ্ট। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে, যা অনেক ইউক্রেনীয়র কাছেই অগ্রহণযোগ্য।
এদিকে পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনারা আরও অগ্রসর হচ্ছে। গত শুক্রবার পুতিন রুশ বাহিনীর এই সাফল্যকে স্বাগত জানিয়ে আগামী সপ্তাহে আরও এলাকা দখলের হুমকি দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। সেখানে শুধু বন্দি বিনিময় হলেও যুদ্ধ বন্ধে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আগে যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলত। কিন্তু এখন মায়ামিতে রাশিয়া ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের এই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণে দুই পক্ষের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত যে, সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
মস্কো মনে করে, এই আলোচনায় ইউরোপের অংশগ্রহণ প্রক্রিয়াটিকে কেবল বাধাগ্রস্তই করে। তবে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রোববার জানায়, পুতিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পেসকভ বলেন, ‘পুতিন মাখোঁর সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে একে ইতিবাচকভাবেই দেখা হবে।’
জবাবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, আলোচনার আগ্রহকে তারা স্বাগত জানায়। তবে যেকোনো আলোচনা জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে করা হবে।
একই সময়ে জেলেনস্কি জানান, গত এক সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ড্রোন, ১ হাজার ২০০ গাইডেড বোমা এবং ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে ওডেসা এবং দক্ষিণ অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শনিবার মস্কো সুমি ও দোনেৎস্ক অঞ্চলের দু’টি গ্রাম দখলের দাবি করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে রাশিয়ার দু’টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে।