বাসস
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৪

ডিআর কঙ্গোর সংঘাতে পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষ

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বোমা ও গুলির আঘাত থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআর কঙ্গো) পূর্বাঞ্চলীয় গোমা শহর দখলের সময় বহু মানুষ হাত অথবা পা হারিয়েছেন। প্রায় এক বছর আগে রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ যোদ্ধারা শহরটি দখলে নিলে ভয়াবহ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ডিআর কঙ্গোর গোমা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩-এর সহিংস অভিযানের ক্ষত বহনকারী বহু মানুষের একজন ২৫ বছর বয়সী ডেভিড মুহিরে। তার পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে।

নর্থ কিভু প্রদেশের রুটশুরু এলাকার বুইজা গ্রামে গরু চরানোর সময় একটি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরিত হলে মুহিরে আহত হন।

বিস্ফোরণে তিনি ডান হাত ও ডান পা হারান। তার সঙ্গে থাকা আরেকজন কৃষক ওই ঘটনায় প্রাণ হারান।

সেই সময় খনিজসমৃদ্ধ ওই অঞ্চলে এক দশকব্যাপী সংঘাত নাটকীয়ভাবে তীব্র হয়ে ওঠে, যার মধ্যে এম২৩ বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নেয়।

পূর্ব ডিআর কঙ্গোর একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি সরকারবিরোধী এম২৩। অঞ্চলটি তিন দশক ধরে অভ্যন্তরীণ ও সীমান্তপারের সহিংসতায় জর্জরিত, যার একটি অংশের সূত্রপাত ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।

চলতি বছরের শুরুতে এম২৩ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক রাজধানী দখলের লক্ষ্যে ঝটিকা অভিযান শুরু করলে এম২৩ যোদ্ধা ও কঙ্গোলিজ সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

এই লড়াই মুহিরের গ্রামের আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হাজারো মানুষ হতাহতের এক অভিযানের পর গোমা ও বুকাভু— উভয় শহরই এম২৩-এর দখলে চলে যায়।

৪ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রুয়ান্ডা ও ডিআর কঙ্গোর নেতাদের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ওই অঞ্চলে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক দিনের মধ্যেই এম২৩ নতুন করে অভিযান শুরু করে এবং ডিআর কঙ্গোর সামরিক মিত্র বুরুন্ডির সীমান্তবর্তী কৌশলগত শহর উভিরাকে লক্ষ্যবস্তু বানায়।

চলতি বছর পূর্ব ডিআর কঙ্গোতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহায়তাপ্রাপ্ত কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্র, মাইন বা অবিস্ফোরিত গোলার আঘাতে আহত ৮০০ জনের বেশি মানুষের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আইসিআরসি জানায়, তাদের মধ্যে ৪০০ জনের বেশি মানুষকে গোমার শিরিকা লা উমোজা কেন্দ্রে আনা হয়। অঙ্গচ্ছেদপ্রাপ্তদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত কেন্দ্র এটি।

কেন্দ্রটির রোগী মুহিরে এএফপিকে বলেন, আমরা কৃত্রিম অঙ্গ পাব এবং শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব বলে আশা করছি।

পাশের একটি কক্ষে সংঘাতের শিশুসহ অন্যান্য ভুক্তভোগী সাইকেল চালাচ্ছিল বা বল নিয়ে খেলছিল।

কেউ পা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল, আবার কেউ নতুন প্লাস্টিকের পায়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল।

সিয়াহানা নামে একজন বলেন, এটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, ভুক্তভোগীর সংখ্যাও তত বাড়ছে।