শিরোনাম

ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার বলেছেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে গত ছয় মাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি মুখোমুখি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে নতুন দফার আলোচনার জন্য কূটনীতিকরা যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে জড়ো হচ্ছেন।
মায়ামি থেকে এএফপি জানায়, রাশিয়ার বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছেন, তিনি মায়ামির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলও আলোচনায় অংশ নিতে এই রৌদ্রোজ্জ্বল মার্কিন শহরে অবস্থান করছে।
আলোচনাগুলোতে মধ্যস্থতা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমার যতদূর বোঝা যাচ্ছে, তারা এই কাঠামোটিই প্রস্তাব করেছে: ইউক্রেন, আমেরিকা, রাশিয়া।’
তিনি যোগ করেন, ইউরোপীয়রা উপস্থিত থাকতে পারে এবং ‘ইতোমধ্যে যে বৈঠকটি হয়েছে, তার সম্ভাব্য ফলাফল বোঝার পর এ ধরনের যৌথ বৈঠক আয়োজন করাই যৌক্তিক হবে।’
ট্রাম্পের দূতেরা এমন একটি পরিকল্পনার পক্ষে চাপ দিচ্ছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। তবে এর বিনিময়ে কিয়েভকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে, যে সম্ভাবনাকে অনেক ইউক্রেনীয় ক্ষোভের চোখে দেখছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন রাজি না হলে কোনো শান্তিচুক্তি হবে না।’
তিনি আরও জানান, নিজের জন্মশহর মায়ামিতে শনিবারের আলোচনায় তিনি যোগ দিতে পারেন।
দিমিত্রিয়েভ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, তিনি ‘মায়ামির পথে রয়েছেন’। পোস্টের সঙ্গে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ইমোজি যুক্ত করেন এবং তালগাছঘেরা এক সৈকতে মেঘের ফাঁক দিয়ে সকালের সূর্যের আলো ফুটে ওঠার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও শেয়ার করেন।
তিনি লেখেন, ‘ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনাকে দুর্বল করতে যুদ্ধোন্মাদরা যখন অতিরিক্ত সময় কাজ করে যাচ্ছে, তখন আমার আগের সফরের এই ভিডিওটির কথা মনে পড়ল, ঝড়ের মেঘ ভেদ করে আলো।’
এর আগে সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা সরাসরি আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসেছিলেন। সে আলোচনায় বন্দিবিনিময় হলেও বাস্তব অগ্রগতি খুব কম হয়েছিল।
রাশিয়া ও ইউরোপীয়দের একসঙ্গে যুক্ত হওয়া আগের তুলনায় একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আলাদা আলোচনা চালিয়েছিল।
তবে ইউরোপীয় আলোচকদের সঙ্গে দিমিত্রিয়েভের সরাসরি আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ দুই পক্ষের সম্পর্ক এখনো চরমভাবে উত্তপ্ত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানো মস্কো মনে করে, আলোচনায় ইউরোপের সম্পৃক্ততা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করবে। তারা প্রায়ই ইউরোপের নেতাদের যুদ্ধপন্থী হিসেবে তুলে ধরে।
সপ্তাহান্তের এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার এক বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন। তিনি যুদ্ধের প্রায় চার বছর পূর্তিতে মস্কোর যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
রাশিয়া শনিবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইউক্রেনের সুমি ও দোনেৎস্ক অঞ্চলের দুটি গ্রাম দখল করেছে। এতে করে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ব্যয়বহুল লড়াই আরও তীব্র হয়েছে।
তবে পুতিন ইঙ্গিত দেন, ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ দিতে রাশিয়া তাদের বিধ্বংসী হামলা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে পারে, যে প্রস্তাব তার ইউক্রেনীয় সমকক্ষ প্রত্যাখ্যান করেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে কখন, কীভাবে নির্বাচন হবে, তা পুতিন ঠিক করে দেবেন না।’ তিনি রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে ভোট আয়োজনের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন।
এদিকে ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় ওদেসা অঞ্চলে রাতভর রুশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটে দাঁড়িয়েছে। এই হামলায় প্রায় তিন ডজন মানুষ আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিদেঙ্কো জানান, হামলায় একটি বেসামরিক বাস আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, নিহতরা ‘সাধারণ ইউক্রেনীয় নাগরিক’ ছিলেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উপকূলীয় এই অঞ্চলে রাশিয়ার হামলা আরও জোরদার হয়েছে। এতে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রচণ্ড শীতে লাখো মানুষের বিদ্যুৎ ও উষ্ণায়ন ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এর আগে মস্কো জানিয়েছিল, ইউক্রেন তাদের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহৃত তেলবাহী ট্যাংকার লক্ষ্য করায় প্রতিশোধ হিসেবে তারা ইউক্রেনীয় বন্দরগুলোতে হামলা বাড়াবে।
শনিবার ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা অধিকৃত ক্রিমিয়ায় একটি বিমানঘাঁটিতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। দেশটির নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ এ তথ্য জানায়।
একই সময়ে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী জানায়, তারা কাস্পিয়ান সাগরে একটি রুশ তেল রিগ এবং এর কাছে থাকা একটি টহল জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের নির্দেশ দেন। তিনি একে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যার লক্ষ্য ছিল দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঠেকানো।
কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের মতে, ইউরোপের মাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় ও প্রাণঘাতী এই যুদ্ধটি একটি উসকানি ছাড়া ও অবৈধ ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা, যার ফলে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের এক ভয়াবহ ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে।