শিরোনাম

ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ অবসানের দায় ইউক্রেন ও এর মিত্রদের ওপরই বর্তায়।
শুক্রবার বর্ঘসমাপনী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সংঘাত বন্ধের ‘বলটি এখন কিয়েভ ও তার মিত্রদের কোর্টে’। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, মস্কো চলতি বছরের শেষ নাগাদ পূর্ব ইউক্রেনে আরও শহর ও জনপদ দখল করবে।
২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা পুতিনের শাসনামলে এটি তার নিয়মিত বছর শেষের সংবাদ সম্মেলন। সেখানে তিনি আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলেন, ইউক্রেনে অভিযান অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাশিয়া। ৭৩ বছর বয়সী পুতিন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিকবার বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনের সেইসব ভূখণ্ড দখল করবে, যেগুলোকে মস্কো রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা করেছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে নিহত হওয়া হাজারো মানুষের মৃত্যুর দায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেন না বলেও জানান পুতিন। সংঘাত জুড়ে মস্কোর প্রচারিত বয়ান পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন ‘এই যুদ্ধ আমরা শুরু করিনি’। ‘প্রাণহানির জন্য আমরা নিজেদের দায়ী মনে করি না,’ যোগ করেন তিনি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন পুতিন। সে সময় কিয়েভ অভিমুখে সেনা ও ট্যাংক পাঠিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা চালানো হয়।
পুতিন দাবি করেন, শান্তি আলোচনায় বিলম্ব ঘটানো বা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ সঠিক নয়; বরং মস্কো ‘কিছু সমঝোতায়’ সম্মত হয়েছিল—যদিও তিনি বিস্তারিত জানাননি।
‘বলটি এখন সম্পূর্ণভাবে আমাদের পশ্চিমা প্রতিপক্ষদের—প্রথমত কিয়েভ শাসনব্যবস্থার প্রধান এবং তাদের ইউরোপীয় পৃষ্ঠপোষকদের—পক্ষে,’ বলেন পুতিন।
ইউক্রেনের পুনর্গঠন ও প্রতিরক্ষায় ইউরোপে জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহারের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ‘গুরুতর’ পরিণতিরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। উল্লেখ্য, ব্রাসেলসে গভীর রাতের আলোচনায় ওই তহবিল ব্যবহারের পরিকল্পনা অনুমোদন পায়নি।
পুতিন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক অগ্রগতি কিয়েভকে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করবে।
পূর্ব ইউক্রেনের একাধিক শহর ও জনপদের নাম উল্লেখ করে তিনি জানান, বছরের শেষ নাগাদ আরও এলাকা দখলের বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।
‘সমগ্র যোগাযোগরেখা জুড়ে আমাদের সেনারা অগ্রসর হচ্ছে,’ বলেন তিনি। ‘আমি নিশ্চিত, বছরের শেষ হওয়ার আগেই আমরা নতুন সাফল্য দেখব,’ যোগ করেন পুতিন।
এএফপির বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার’-এর তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে রাশিয়া গত এক বছরে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি অর্জন করে।
পশ্চিমাদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, রাশিয়াকে ‘সম্মান’ দেখানো হলে মস্কো অন্য দেশ আক্রমণ করবে না, তবে ‘সম্মান’ বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
এ সময় ওয়ারশ সফরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন পতন হলে রাশিয়া পোল্যান্ডের দিকেও অগ্রসর হতে পারে।
ঘণ্টাব্যাপী এই টেলিভিশন সম্প্রচার—যেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পাশাপাশি রাশিয়ার ১২টি সময় অঞ্চলের নাগরিকদের ফোনকলও নেওয়া হয়, রুশ রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারের একটি নিয়মিত আয়োজন।
ক্রেমলিন জানায়, প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পুতিনকে প্রশ্ন পাঠিয়েছেন এবং অনুষ্ঠানকে ঘিরে মস্কোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
পুতিন ভূরাজনীতি থেকে শুরু করে আঞ্চলিক উন্নয়ন, নানাবিধ বিষয়ে কথা বলেন এবং স্থানীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়া নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপের আশ্বাস দেন।
অর্থনীতির বিষয়ে তিনি যুদ্ধের প্রভাব খাটো করে দেখান। প্রায় চার বছর ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া; একই সঙ্গে বাড়তি সামরিক ব্যয়ে সরকারি অর্থনীতি ও মূল্যস্থিতিশীলতায় চাপ তৈরি হয়েছে।
পুতিন স্বীকার করেন, রুশ পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তিনি বলেন, ‘রুশ অর্থনীতি স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী রাখতে এবং দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত রাখতে আমরা সবকিছু করব।’
শুক্রবার রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার প্রেক্ষাপটে নীতিসুদহার কমিয়ে ১৬ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়।
পুতিন আরও দাবি করেন, ইউক্রেনে লড়াইয়ের জন্য এখনও বিপুলসংখ্যক রুশ নাগরিক স্বেচ্ছায় নিবন্ধন করছেন; চলতি বছর প্রায় চার লাখ নতুন নিবন্ধন হয়েছে। তবে ২০২২ সালে আংশিক সামরিক সমাবেশ ঘোষণার পর বিপুলসংখ্যক রুশ নাগরিক দেশ ছাড়েন।
যুদ্ধকালীন সেন্সরশিপের আওতায় রাশিয়ায় ইউক্রেন অভিযান নিয়ে সমালোচনা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে কথা বলায় হাজারো নাগরিককে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা সোভিয়েত যুগের পর সবচেয়ে কঠোর দমন হিসেবে বিবেচিত। তবে পুতিন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো দমন নেই।’
উল্লেখ্য, পুতিনের সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বর্তমানে হয় নির্বাসনে, নয়তো কারাগারে, অথবা মৃত।