শিরোনাম

ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সমুদ্র তীরবর্তী ইহুদিদের একটি উৎসবে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহতদের স্মরণে শনিবার সিডনির বন্ডাই বিচের তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সার্ফ লাইফ সেভাররা।
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই বন্দুক হামলার ঘটনার ছয় দিন পর, পুরো সৈকত জুড়ে পানির ধারে দাঁড়িয়ে এই নিরবতা পালন করেন শতাধিক উদ্ধারকর্মী।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
ঘটনায় অভিযুক্ত দুই হামলাকারীর মধ্যে ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরামকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে, আর তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ জীবিত রয়েছেন। নাভিদ পুলিশের পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ ১৫টি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
লাল-হলুদ ইউনিফর্ম পরা লাইফ গার্ডরা সমুদ্রের দিকে মুখ করে তিন মিনিট নীরবতা পালন করেন।
সকাল বেলার ওই অনুষ্ঠানে অনেককে কাঁদতে দেখা যায় এবং এ সময় কেউ কেউ একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন।
এই অনুষ্ঠান চলাকালে আকাশে একটি সার্ফ লাইফ সেভিং হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছিল।
টেলিভিশনের ফুটেজে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
দেশ জুড়ে দুই লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবী সার্ফ লাইফ সেভারকে তাদের সকালের দায়িত্ব শুরুর আগে বন্ডি হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই নীরবতা পালনে আহ্বান জানানো হয়।
বন্ডাই বিচের দুটি লাইফ সেভিং ক্লাব এক যৌথ বার্তায় জানায়, এখানে ঘটে যাওয়া এই ট্র্যাজেডিকে স্বীকৃতি জানানো এবং একই সঙ্গে এই হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান ও সহমর্মিতা প্রকাশ করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
যৌথ বার্তায় আরও জানানো হয়, যারা প্রাণ হারিয়েছেন, যারা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন, যারা জীবন বাঁচাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং আমরা সবাই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তাদের কখনোই ভুলব না।’
১৪ ডিসেম্বরের হামলার দিন বন্ডাই লাইফগার্ডদের সাহসিকতার জন্য ব্যাপক প্রশংসা করা হয়েছে। তারা আহতদের নিরাপদে সরিয়ে নেন, প্রাথমিক চিকিৎসা ও পুনরুজ্জীবন কার্যক্রম চালান এবং তারা আতঙ্কিত সাঁতারুদের ঢেউয়ের মধ্য থেকে উদ্ধার করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, লাইফগার্ড জ্যাকসন ডুলান পাশের একটি সৈকত থেকে খালি পায়ে দৌড়ে বন্ডাইর দিকে যাচ্ছেন, আহতদের সাহায্য করার জন্য এ সময় তার হাতে একটি ডিফিব্রিলেটর ছিল।
স্থানীয় মেয়র তার এই কাজকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেন।
রোববার অস্ট্রেলিয়ায় ‘আলো অন্ধকারের বিরুদ্ধে’ প্রতিপাদ্যে জাতীয় স্মরণ দিবস পালিত হবে।
হামলার এক সপ্তাহ পূর্তিতে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, এ সময় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং নিহতদের সম্মানে ও ইহুদি সম্প্রদায়ের পাশে থাকার বার্তা দিতে নাগরিকদের জানালায় মোমবাতি জ্বালাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শনিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ যাদের আমাদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল, সেই ১৫ জন অস্ট্রেলীয়র জন্য দৈনন্দিন জীবনের কোলাহল থেকে ৬০ সেকেন্ড আলাদা করে রাখুন।’
অ্যান্থনি আলবানিজ আরও জানান, বন্ডাই বিচে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ স্থাপন এবং নতুন বছরে একটি জাতীয় শোকদিবস পালনের বিষয়েও ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা ও ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে একগুচ্ছ জাতীয় উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি আরও কঠোর ফেডারেল আইন ও কঠিন শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেন।
নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স শনিবার জানান, তার রাজ্যে ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ বা ‘বিশ্বজুড়ে ইন্তিফাদা ছড়িয়ে দাও’র মতো “ঘৃণামূলক” স্লোগান ও ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর পতাকার মতো প্রতীক নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পাশাপাশি, জনসমক্ষে মুখ ঢাকার বিষয়েও পুলিশকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোনো দিক বাদ দেওয়া হবে না।’
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী দল হামলার আগে অভিযুক্ত বন্দুকধারীদের যোগাযোগ ও চলাচল নিয়ে বিস্তৃত তদন্ত চালাচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের ধারণা, এই জুটি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে ফিলিপাইনে সফরের সময় তারা ইসলামপন্থী চরমপন্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি পরোয়ানা নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে, তবে স্থানগুলো প্রকাশ করা হয়নি।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট বলেন, ‘দেশের ভেতরে ও বাইরে, কোনো দিকই আমরা বাদ দিচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, জীবিত অভিযুক্ত ওই বন্দুকধারীর বিরুদ্ধে মামলা চালানোর জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই হামলার আগে অভিযুক্তরা কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তাদের সক্ষমতা ও সংযোগ কী ছিল, তার সব কিছুই আমরা নির্ধারণ করব।’