শিরোনাম

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে প্রকাশ্যে ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের স্লোগানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দেশটির পুলিশ।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে ‘ইন্তিফাদা আহ্বান সংক্রান্ত স্লোগান’ দেওয়ার অভিযোগে দুই জনকে ‘জাতিগত বিদ্বেষ প্রসূত জন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, পরে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া প্রথম দফার গ্রেফতারে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আরেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ম্যানচেস্টারের পুলিশ ঘোষণা দেয় যে তারা এ ধরনের বিক্ষোভে ‘আরও কঠোরভাবে’ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, আর সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ইহুদিবিদ্বেষ ও সহিংসতায় উসকানিমূলক স্লোগান ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে হানুক্কা উৎসবে রোববার বাবা ও ছেলের বন্দুক হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি অক্টোবরে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র দিন ইয়োম কিপুরে ম্যানচেস্টারের একটি উপাসনালয়ে হামলার ঘটনাও তাদের ওপর আবার নতুন করে হামলার উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের (জিএমপি) কমান্ডাররা এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ ধরনের প্ল্যাকার্ড ও স্লোগান নিয়ে সম্প্রদায়গুলো উদ্বিগ্ন, এটা আমরা জানি। সহিংস ঘটনা ঘটেছে এবং এর প্রেক্ষাপটও বদলেছে, তাছাড়া শব্দগুলোর অর্থ ও পরিণতি রয়েছে। এ ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং তাদেরকে গ্রফতার করব।
এদিকে, ইহুদি সংগঠনগুলো এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের প্রধান রাব্বি এফ্রাইম মিরভিস বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় এ ধরনের ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ধরনের ঘৃণামূলক বক্তব্য সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে অনুপ্রাণিত করে।’
তবে, ফিলিস্তিন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের বেন জামাল এক বিবৃতিতে বলেন, এ সিদ্ধান্ত মানুষের প্রতিবাদের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট ও জিএমপি’র এই অবস্থান ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে প্রতিবাদ দমনের আরেকটি নিম্নস্তরকেই নির্দেশ করে।’
তার সংগঠনের আয়োজিত এই লন্ডনের বিক্ষোভে এক হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেয় বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন।
জামাল আরও বলেন, পুলিশের এই নতুন অবস্থানের আগে, কোনো পরামর্শ করা হয়নি।
তার যুক্তি, ‘আরবি শব্দ ‘ইন্তিফাদা’র অর্থ হলো ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁকুনি দেওয়া বা বিদ্রোহ’।
তিনি আরও বলেন, প্রথম ইন্তিফাদা মূলত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দিয়েই চিহ্নিত ছিল।
ইন্তিফাদা বলতে ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের গণ-অভ্যুত্থানকে বোঝায়।
প্রথম ইন্তিফাদা হয় ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত, আর দ্বিতীয়টি ছড়িয়ে পড়ে ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে।
চলতি বছর সহিংস ঘটনার পর যুক্তরাজ্যে সিনাগগ, ইহুদি স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোর নিরাপত্তা ইতোমধ্যেই জোরদার করেছে দেশটির পুলিশ।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অস্ট্রেলিয়ায় সপ্তাহান্তের বন্দুক হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি ছিল ‘ইহুদি পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে একটি ইহুদি বিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা’।
স্টারমারের স্ত্রী ইহুদি।
প্রধান কৌঁসুলি লায়নেল ইদান বলেন, ব্রিটেনের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) ইতোমধ্যে পুলিশ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যাতে ইহুদি বিদ্বেষী ঘৃণাজনিত অপরাধ শনাক্ত, অভিযোগ গঠন ও বিচার নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, “আমরা সব সময় এটি আরও কীভাবে কার্যকর হওয়া যায়, তা বিবেচনা করব।”
সিপিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ঘৃণাজনিত অপরাধের রেফারাল ও বিচার ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৫ হাজার ৫৬১টিতে দাঁড়িয়েছে।