শিরোনাম

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে ইহুদি হানুক্কা উৎসবের সমাবেশে বাবা ও ছেলের গুলিতে নিহত ১৫ জনের মধ্যে ছিলেন একটি ১০ বছরের একটি শিশু এবং হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা একাধিক ব্যক্তি।
৫০ বছর বয়সী বন্দুকধারী সাজিদ আকরাম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং জানা গেছে তিনি কোমা থেকে ফিরে এসেছেন।
রোববারের এই হামলায় নিহতদের বয়স ছিল ১০ থেকে ৮৭ বছরের মধ্যে। অনেকেই হামলাকারীদের হাত থেকে অন্যদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কারও নাম প্রকাশ না করলেও, এ পর্যন্ত যে সব ১২ জনকে প্রকাশ্যে শনাক্ত করা হয়েছে তারা হলেন, ১০ বছর বয়সী এই মাতিল্ডা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যায়।
শিশুটির খালা লিনা চেরনিখ চ্যানেল সেভেন টেলিভিশনকে জানান, হামলার সময় মাতিল্ডা তার ছয় বছর বয়সী বোন সামারের সঙ্গে ছিল।
তিনি বলেন, ‘সবকিছু তার চোখের সামনেই ঘটেছে।’
লিনা আরও বলেন, ‘সে ভীষণভাবে আতঙ্কিত ও কাঁদছিল।’
তিনি বলেন, “আমি চাই মানুষ একটি সুন্দর ও মিষ্টি শিশু হিসেবে মাতিল্ডাকে মনে রাখুক, সে যেন এক টুকরো রোদের মতো, জীবনের আলো।’
লিনা আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমাদের পরিবার আর কখনো আগের মতো হবে না।’
অবসরপ্রাপ্ত মেকানিক ও বন্ডির বাসিন্দা বরিস গুরম্যান (৬৯) ও তার স্ত্রী সোফিয়া গুরম্যান (৬১) সাজিদ আকরামকে থামাতে গিয়ে প্রথম নিহত হন।
ড্যাশক্যাম ফুটেজে দেখা যায়, বরিস আকরামকে মাটিতে ফেলে তার দীর্ঘনলের বন্দুকটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সোফিয়াও তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, আকরাম পরে আরেকটি বন্দুক বের করে এই দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করে।
তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বরিস ও সোফিয়াকে হারানোর বেদনা কিছুই কমাতে পারে না, তবে তাদের সাহস ও আত্মত্যাগের জন্য আমরা গভীর গর্ব অনুভব করি।’
হলোকাস্ট থেকে জীবিত অবস্থায় বেঁচে ফেরা ৮৭ বছর বয়সী অ্যালেক্স ক্লেইটম্যান ছিলেন এই হামলায় নিহত সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।
তার স্ত্রী লারিসা দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকাকে বলেন, ‘হঠাৎ ‘বুম বুম’ শব্দ হলো এবং সবাই মাটিতে পড়ে গেল। সে (তার স্বামী) আমার পেছনে ছিল, সে দ্রুত আমার কাছে চলে আসে এবং আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে।’
ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া ক্লেইটম্যান হলোকাস্টের জীবিত সাক্ষী ছিলেন বলে জানায় চাবাদ আন্দোলনের ওয়েবসাইট। যারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল।
৮২ বছর বয়সী মারিকা পোগানি অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে বসেছিলেন। তিনিও হলোকাস্ট থেকে জীবিত ফিরেছিলেন।
দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী পোগানি ২০২২ সালে বহু বছর ধরে কোশার খাবার বিতরণের জন্য সম্মানিত হন।
বন্ধুরা তাকে একজন ‘অসাধারণ মানুষ’ হিসেবে স্মরণ করেন।
৬২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রেউভেন মরিসন গুলিবর্ষণ শুরু হতেই বন্দুকধারীদের দৃষ্টি সরাতে চেষ্টা করেন।
তার মেয়ে শেইনা গুটনিক সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের দিকে ইট ছুড়েছিলেন।’
শেইনা আরও বলেন, ‘আমার বাবা ইহুদি হওয়ার কারণে, অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে নিহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি তার লাশের কাছে পৌঁছাই।’
৭৮ বছর বয়সী টিবর ভাইৎসেন এক বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন।
টিবরের নাতি মেন্ডি আমজালাক বলেন, ‘আমি ডিফিব্রিলেটর নিয়ে ছুটে যাই। ওই সময়ে গুলিবর্ষণ চলছিল। আহতদের চিকিৎসা করতে করতে হঠাৎ তার লাশটি দেখতে পাই। তিনি আমার দাদির পুরনো এক বন্ধুকে ঢাল হয়ে রক্ষা করছিলেন।’
ড্যান এলকায়াম ছিলেন ফরাসি নাগরিক ও উদীয়মান অপেশাদার ফুটবলার।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে একে “সিডনিতে সংঘটিত ইহুদিবিরোধী সন্ত্রাসী হামলা” বলে উল্লেখ করেন।
রকডেল ইলিনডেন ফুটবল ক্লাব তাকে ‘অত্যন্ত প্রতিভাবান ও জনপ্রিয় খেলোয়াড়’ হিসেবে স্মরণ করে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ডিটেকটিভ সার্জেন্ট পিটার মিগার অনুষ্ঠানটি কভার করতে গিয়ে নিহত হন।
র্যান্ডউইক রাগবি ক্লাব জানায়, দীর্ঘদিন বিপজ্জনক দায়িত্ব পালন করার পর অবসরে ছবি তুলতে গিয়ে এমন মর্মান্তিকভাবে তার এই মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয় বিদারক।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘তিনি ছিলেন স্নেহশীল ভাই, স্বামী ও চাচা। এই ঘটনায় আমাদের জীবন চিরতরের জন্য বদলে গেল।’
৩৯ বছর বয়সী রাব্বি ইয়াকভ লেভিটান ছিলেন চার সন্তানের জনক।
চাবাদ জানায়, তিনি দাতব্য সংস্থাগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহে সহায়ক একটি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং মানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করতেন।
৪১ বছর বয়সী রাব্বি এলি শ্লাঙ্গার অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিলেন। তিনি ‘বন্ডি রাব্বি’ নামেও সবার কাছে পরিচিত ছিলেন।
তিনি ছিলেন পাঁচ সন্তানের বাবা।
অস্ট্রেলিয়ান ইহুদি কাউন্সিলের অ্যালেক্স রিভচিন বলেন, ‘সবাই তাকে চিনত, তাকে জানত। তিনি ছিলেন আমাদের সেরাদের একজন।’
বৈষম্যবিরোধী কর্মী এডিথ ব্রুটম্যানও নিহতদের মধ্যে ছিলেন।
বি’নাই ব্রিথ এনএসডব্লিউ এর সহকর্মী আর্নি ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং বৈষম্য ও পূর্বাগ্রহের বিরুদ্ধে কাজ করতে ভীষণভাবে আগ্রহী ছিলেন।’