বাসস
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:০৪

তুর্কমেনিস্তান-শীর্ষ বৈঠকে রুশ, তুর্কি ও ইরানি নেতারা মিলিত

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের শীর্ষ নেতারা শুক্রবার তুর্কমেনিস্তানে এক ব্যতিক্রমী বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।

মধ্য এশিয়ায় একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হল তুর্কমেনিস্তান। এ বছর দেশটি জাতিসংঘ থেকে আনুষ্ঠানিক নিরপেক্ষতার ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। এ উপলক্ষ্যে এই আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

আশগাবাত থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, ‘স্থায়ী নিরপেক্ষতা’ নীতিটি সাবেক এই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র নীতির মূলভিত্তি। এই নীতিই দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

সম্মেলনের অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ আঞ্চলিক নেতারা।

মরু অধ্যুষিত দেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক:

প্রেসিডেন্টদের বংশপরম্পরা

ইরান, আফগানিস্তান ও ক্যাস্পিয়ান সাগরের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে তুর্কমেনিস্তানের। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দেশটি স্বাধীন হয়। তারপর থেকে মাত্র তিনজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় ছিলেন।

প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাপারমুরাত নিয়াজভ। তিনি নিজেকে ‘আজীবন প্রেসিডেন্ট’ এবং ‘তুর্কমেনদের জনক’ ঘোষণা করেছিলেন। টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।

২০০৬ সালে শাসনভার গ্রহণ করেন গুরবানগুলী বারদিমুখামেদোভ। তিনি প্রেসিডেন্ট হন। ২০২২ সালে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ছেলে সেরদার বারদিমুখামেদোভকে। তবে বাস্তবে তারা যুগলভাবে দেশ পরিচালনা করেন। গুরবানগুলীর এখনো বিশাল ক্ষমতা রয়েছে। সরকারিভাবে তিনি ‘তুর্কমেন জাতির নেতা’ এবং ‘আরকাদাগ’ (নায়ক-রক্ষক) উপাধিতে ভূষিত। নিজের নামে তিনি আরকাদাগ নামে বিশাল শহর গড়ে তুলেছেন, যার ব্যয় কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার। শহরে নিজের বিশাল স্বর্ণমূর্তিও স্থাপন করেছেন।

নিরপেক্ষ ও বিচ্ছিন্ন

তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় দেশ। প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে দেশটিকে অনেক সময় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘ দেশটিকে ‘স্থায়ী নিরপেক্ষতার’ স্বীকৃতি দিলে এটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানী আশগাবাতে প্রায় ১০০ মিটার উচ্চতার নিরপেক্ষতা মনুমেন্ট রয়েছে। রকেটের মতো দেখতে ওই স্মৃতিস্তম্ভে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের স্বর্ণমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।

এই অবস্থান দেশটিকে কোনো সামরিক বা বেসামরিক জোটে যোগদান থেকে বিরত রাখে। সরকারও এ পরিস্থিতি ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন নীতি বাস্তবায়ন করে।

শীর্ষ সম্মেলনের আগে সেরদার বারদিমুখামেদোভ একটি বই প্রকাশ করেছেন। এটিকে তুর্কমেন জনগণের জন্য ‘মূল্যবান উপহার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে নিরপেক্ষ নীতির প্রশংসা করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

তুর্কমেনিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চীন, রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে। গ্যাস চুক্তির কারণে এই চার দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতা এখনও সীমিত।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তুর্কমেনিস্তানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ কিংবা স্বাধীন গণমাধ্যমের কার্যক্রম নেই। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার বলেছে, দেশটির তথ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং সাধারণত যাচাইযোগ্য নয়, এবং প্রধানত সরকারের প্রশংসা প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রাকৃতিক সম্পদ ও চ্যালেঞ্জ

প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের পরিমাণের দিক থেকে তুর্কমেনিস্তান বিশ্বে চতুর্থ-বৃহত্তম। তবে পানির সরবরাহ সীমিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমস্যা আরও বেড়েছে।

দেশের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত কারাকুম মরুভূমি রয়েছে।

তুর্কমেন অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো তুলা। তবে চাষে পানির বেশি ব্যবহার পুরো অঞ্চলে পানির সংকট বাড়াচ্ছে।

মিথেন ‘নরকের দরজা’

কঠিন কারাকুম মরুভূমিতে একটি প্রাকৃতিক গ্যাসের গর্ত ৫০ বছর ধরে জ্বলে আসছে। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা ভুলবশত এটি প্রজ্বালিত করেন। ‘নরকের দরজা’ নামে পরিচিত গর্তটি এখন দেশের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। গর্ত বন্ধ করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখান থেকে নিঃসৃত গ্যাস পরিবেশের জন্য হুমকি। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা মতে, তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের শীর্ষ মিথেন নিঃসরণকারী দেশ।

পবিত্র প্রাণী

ঘোড়া ও কুকুরের স্থানীয় কয়েকটি প্রজাতিকে পবিত্র ধরা হয়। জাতীয় প্রতীকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। গুরবানগুলী আলাবাই বা সেন্ট্রাল এশিয়ান শেফার্ড কুকুর এবং আখাল-টেকে ঘোড়ার মূর্তি তৈরি করেছেন। নিজের পছন্দের ঘোড়াকে সম্মান জানাতে গানও রচনা করেছেন। বাবা-ছেলে নিয়মিত বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের কুকুর ও ঘোড়া উপহার হিসেবে দেন এবং জনসমক্ষে এগুলোকে আদর করেন।