বাসস
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৬

বেনিনে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর পলাতক সেনাদের খোঁজে তৎপর সামরিক বাহিনী

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সপ্তাহের শেষে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় জড়িত পলাতক সেনাদের সন্ধানে সোমবার ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে বেনিনের সামরিক বাহিনী। এ ঘটনার সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে পাশের বেশ কয়েকটি পশ্চিম আফ্রিকান দেশও সামরিক সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।

কোটোনু থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

বিশ্বস্ত সামরিক সূত্র জানায়, এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা বেশ কজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবারের মধ্যে সব জিম্মিকে, মুক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও ছিলেন।

সোমবার বিকেল নাগাদ দেশটির অর্থনৈতিক রাজধানী কোটোনুতে পরিস্থিতি শান্ত ছিল। সড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল করতে দেখা যায়। 

এর এক দিন আগে একদল সেনা সদস্যরা জাতীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল।

রোববার রাতে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে প্রেসিডেন্ট পাত্রীস তালোঁ জানান, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। ৬৭ বছর বয়সী তালোঁ আগামী এপ্রিলেই দুই মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার কথা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে।


রোববারের এই অভ্যুত্থান চেষ্টা পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে সাম্প্রতিক সফল সামরিক অভ্যুত্থানগুলোর ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন। এর আগে নাইজার, বুরকিনা ফাসো, মালি, গিনি এবং গত মাসে গিনি-বিসাউতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। সরকার জানায়, তালোঁর কোটোনু বাসভবনে অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে রিপাবলিকান গার্ডের ‘হিংসাত্মক সংঘর্ষ’ হয়। উভয় পক্ষই হতাহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্টের সেনাপ্রধান জেনারেল বের্তিন বাদার স্ত্রী।

ঘটনার পর বেনিন দ্রুত প্রতিবেশী নাইজেরিয়ার সহায়তা চায়। নাইজেরিয়া জানায়, তারা কোটোনুতে সামরিক হামলা চালিয়েছে এবং সেনা মোতায়েন করেছে।

পশ্চিম আফ্রিকান আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াসও বেনিনকে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে, সোমবার আবিদজানে নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করা হয়। ২০২৩ সালে নাইজারের অভ্যুত্থানের সময়ও ইকোওয়াস হস্তক্ষেপের হুমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করেনি।

এক সামরিক সূত্র সোমবার জানায়, কতজন এই অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলেন বা কতজন এখনো পালিয়ে আছেন—তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অনেকেই গ্রামীণ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তল্লাশি চলছে’ ও ‘গ্রেফতারও হয়েছে।’

অন্য সূত্র জানায়, প্রায় এক ডজন সেনা সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তবে অভ্যুত্থান নেতৃত্বদানকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাস্কাল তিগ্রি পলাতক রয়েছেন। 

সব জিম্মিকেই মুক্ত করা হয়েছে বলে সামরিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেনাপ্রধান আবু ইসা ও সেনা প্রধান কর্নেল ফাইজু গোমিনাকে অপহরণ করা হলেও রাতে তাদের মুক্ত করা হয়।

রোববার রাতে ভাষণে প্রেসিডেন্ট তালোঁ বলেন, দেশ ‘দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে’ এবং ‘শেষ প্রতিরোধও ভেঙে ফেলেছে।’

সোমবার বিকেলে কোটোনুতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের পথে যান চলাচল বন্ধ ছিল। শহরের বিভিন্ন স্থানে সামরিক ট্যাঙ্ক দেখা গেছে।

ইকোওয়াস জানায়, ঘানা, আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া ও সিয়েরা লিওন থেকে সৈন্য পাঠানো হচ্ছে যাতে বেনিনে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়।

জাতিসংঘ, সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ও আফ্রিকান ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল অভ্যুত্থানচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। বেনিনের সংবিধান অনুযায়ী তালোঁ তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তার মনোনীত উত্তরসূরি অর্থমন্ত্রী রোমুয়াল্ড ওদাগনি আগামী এপ্রিলের নির্বাচনে শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটস নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। প্রধান বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীর পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষক না থাকায় তাকে থেকে ভোট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দলটি এএফপিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ‘জোর করে ক্ষমতা দখলকে প্রত্যাখ্যান করে’ এবং এসব ঘটনা দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই ‘নৃশংস ও মর্মান্তিক ঘটনা’ দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষকে সংলাপে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা আরো স্পষ্ট করে তুলেছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য তালোঁ প্রশংসিত হলেও, সমালোচকরা দেশটিকে স্বৈর শাসনের জন্য অভিযুক্ত করেন। ১৯৬০ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার পর দেশটির ইতিহাসে বেশ ক’টি সামরিক অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে।