শিরোনাম

ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শ্রীলঙ্কায় প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে নতুন করে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর (ডিএমসি)।
এদিকে, গত সপ্তাহে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’র ধ্বংসযজ্ঞের পর রোববার দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬১৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী বন্যা ও ভূমিধসের ফলে শ্রীলঙ্কার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। এটি চলতি শতাব্দীতে এই দ্বীপ রাষ্ট্রে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
ডিএমসি জানায়, বর্তমান মৌসুমি বৃষ্টিপাতে কেন্দ্রীয় পার্বত্য অঞ্চলসহ উত্তর-পশ্চিমের উঁচু এলাকাগুলোর ঢাল আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে, আর এই অবস্থা আবার নতুন করে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
রোববারও সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজে করে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের কাছে খাদ্যসহ জরুরি সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছে।
এদিকে শ্রীলঙ্কা বিমানবাহিনী জানায়, মিয়ানমার থেকে একটি প্লেন করে প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেছে। এই ত্রাণ সামগ্রীগুলো সর্বশেষ বিদেশি সহায়তা।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, লাশগুলোর মধ্যে ৪৬৪টিকেই দেশের বিখ্যাত চা উৎপাদনকারী মধ্যাঞ্চল থেকে পাওয়া গেছে এবং এখনও আরও ২০৯ জন নিখোঁজ রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির ফলে, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের সংখ্যা কমে ১ লাখে নেমে এসেছে।
কয়েক দিন আগে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এই মানুষের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
ঘূর্ণিঝড়ে ৭৫ হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ৫ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
সরকার শুক্রবার যে ব্যাপক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন করে নিরাপদ এলাকায় জমি কেনা ও ঘর নির্মাণের জন্য, ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে যাওয়া পরিবারগুলোকে ১ কোটি রুপি (প্রায় ৩৩ হাজার ডলার) পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
মৃত বা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে পড়া প্রতি ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
প্রকল্পের ব্যয় সরকার জানায়নি, আর এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ দেশটি সম্প্রতি ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট থেকে সবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
এক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, পুনর্গঠন কাজের মোট ব্যয় ৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শুক্রবার জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার পুনর্গঠনের জন্য অতিরিক্ত ২০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার অনুরোধটি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এটি ছাড়াও, চলতি মাসে দেশটি পাচ্ছে ৩৪৭ মিলিয়ন ডলার আর ২০২৩ সালে অনুমোদিত চার বছর মেয়াদী ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের উদ্ধার তহবিলের অংশ হিসেবে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে সংসদে বলেন, অর্থনীতি আগের তুলনায় শক্তিশালী হলেও এই মাত্রার দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা এখনো অর্জিত হয়নি।
এদিকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ও সরকারি সব ব্যাংককে ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণ পুনঃতফসিল করার নির্দেশ দিয়েছে।