বাসস
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১১

ইসরাইল অনুমতি পাওয়ায় তিনটি দেশের ইউরোভিশন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা বয়কট

ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ইসরাইলের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ নিয়ে ভোট না করার সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক ইউরোভিশন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে তিনটি দেশ। 

বৃহস্পতিবার দেশগুলো ঘোষণা করে যে তারা আগামী বছরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। তবে আইসল্যান্ড জানায়, তারা নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে। 

এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানো দেশ তিনটি হচ্ছে— স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।

জেনেভা থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

ফরাসি কনকরর্স ইরোভেশন ডি লা শানসন সংক্ষেপে ‘ইউরোভিশন সঙ কনটেস্ট’ নামে পরিচিত। 

এটি ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। 

১৯৫৬ সাল থেকে ইবিইউ’র সদস্য দেশগুলোর অংশগ্রহণে এই প্রতিযোগিতা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গাজায় যুদ্ধবিরোধী ব্যাপক জনমতের কারণে, দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলকে বার্ষিক এ প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জোরদার হয়ে আসছিল। 

গতবারের আসরে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ইসরাইলকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে।

কিন্তু জেনেভায় বৈঠক শেষে ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) জানায়, প্রতিযোগিতার প্রতি আস্থা বাড়াতে ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় যে সব সংস্কার আনা হয়েছে, সদস্যদের  সেগুলোর প্রতি স্পষ্ট সমর্থন রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অংশগ্রহণ নিয়ে আর ভোটের প্রয়োজন নেই— এমনটাই মনে করেন সদস্যদের বড় অংশ। অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা রেখে ইউরোভিশন-২০২৬ আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’

ইবিইউ’র বিবৃতি প্রকাশ হতেই স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমগুলো জানায়, তারা পরের বছর প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। এই তিন দেশই এর আগে ইসরাইলকে বাদ দেওয়ার পক্ষে ছিল।

—‘অগ্রহণযোগ্য’—

স্পেনের সম্প্রচার সংস্থা আরটিভিই’র মহাসচিব আলফোনসো মোরালেস বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রক্রিয়া ঘোষিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ইসরাইলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতাকে ব্যবহার করার করা হচ্ছে। ইউরোভিশনকে নিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক আয়োজন হিসেবে রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।’

আয়ারল্যান্ডের জাতীয় টেলিভিশন আরটিই জানায়, গাজায় ভয়াবহ প্রাণহানি ও চলমান মানবিক সংকটের মুখে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা ‘অগ্রহণযোগ্য’।

নেদারল্যান্ডসের সম্প্রচার সংস্থা এভিআরওটিআরওএস জানায়, আগামী বছর প্রতিযোগিতায় ডাচদের অংশগ্রহণ তাদের প্রতিষ্ঠানের মৌলিক জনমূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আইসল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আরইউভি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইসরাইলের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও আইসল্যান্ড প্রতিযোগিতায় থাকবে কি-না, তা আগামী বুধবার বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।’ 

এর আগেও দেশটি এই আয়োজন বর্জন করবে বলে জানিয়েছিল।

বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনও গাজা পরিস্থিতির কারণে বয়কট বিবেচনা করেছিল।

তবে বৃহস্পতিবার রাতের দিকে সুইডেনের এসভিটি জানায়, তারা নতুন নিয়মকে সমর্থন করছে ও  আগামী বছরের স্বাগতিক দেশ অস্ট্রিয়া নিরাপত্তা উদ্বেগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। 

এসভিটি জানায়, তারা এই ইউরোভিশনে অংশ নেবে।

— ভোট নিয়ে প্রশ্ন —

ইবিইউ’র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ বলেন, ইসরাইল ‘বিশ্বের প্রতিটি মঞ্চেই প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার যোগ্য।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘ইসরাইলের অংশগ্রহণের কারণে যে সব দেশ একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতা বর্জন করেছে, আমি তাদের জন্য লজ্জিত। এ লজ্জা তাদেরই।’

জার্মানির সংস্কৃতিমন্ত্রী উলফ্রাম ওয়েইমারের উদ্ধৃত করে বিল্ড পত্রিকা জানিয়েছে, ‘জার্মানির মতো ইসরাইলও ইউরোভিশনের অংশ।’

জেনেভায় কড়া নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের আগে সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত ছিলেন। 

এ সময় জার্মানি প্রকাশ্যে ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ইসরাইলি শিল্পী ইউভাল রাফায়েল জনভোটে হঠাৎ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলে এ বছর ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

গত বছরও ইসরাইলের ইডেন গোলান জাতীয় বিচারকদের কাছে তুলনামূলক কম নম্বর পেলেও অনলাইন ভোটে পঞ্চম স্থানে উঠে এলে একই অভিযোগ ওঠে।

ইউরোভিশনে প্রথমে জাতীয় বিচারকরা ভোট দেন, এরপর ফোন, টেক্সট বা অনলাইন ভোট যোগ হয়— যা প্রায়ই তালিকায় বড় পরিবর্তন আনে।

নিজ নিজ দেশের গানকে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই।  কারণ দেশগুলো তাদের নিজস্ব প্রবেশের পক্ষে ভোট দিতে পারে না, তবে এভিআরওটিআরওএস এই বছরের শেষ অনুষ্ঠানে এই ভোটকে প্রভাবিত করতে ইসরাইলের ‘হস্তক্ষেপের প্রমাণ’ পেয়ে বলে অভিযোগ করেছে।