বাসস
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪০

ইউরোপের ‘আত্মবিশ্বাস’ ফেরানোর আহ্বান জার্মান প্রেসিডেন্টের

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ইউরোপের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা জোরদারে নতুন করে আত্মবিশ্বাস গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার। 

বৃহস্পতিবার সিটি অব লন্ডনের গিল্ডহলে একটি নৈশভোজে এই আহ্বান জানান তিনি। 

যুক্তরাজ্যে তার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে এটি ছিল অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। 

লন্ডন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

ঐতিহাসিক গিল্ডহলের ঝলমলে হলে ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশে স্টাইনমায়ার বলেন, ইউরোপের এখন দরকার নতুন নতুন উদ্ভাবনী মনোভাবের। লন্ডনের এই ‘স্কয়ার মাইল’ যেভাবে উদ্ভাবনের চেতনা ধরে রেখেছে, ইউরোপকেও সেই মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা ইউরোপীয়রা শক্তিশালী হতে চাইলে, নিজেদের ভূমিকাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে হবে।’ 

এ সময় স্টাইনমায়ারের স্ত্রী এলকে বুডেনবেন্ডার তার সঙ্গে ছিলেন।

ইউরোপের মূল শক্তিগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুঁজি, প্রতিভা, অবকাঠামো ও আইনি নিশ্চয়তা— এ সবই আমাদের আছে। তাই ইউরোপকে এখনই ডিজিটাল অর্থনীতিতে গতি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’ 

এ সময় স্টাইনমায়ার আরও বলেন, লন্ডনের আর্থিক কেন্দ্র এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে সামনে দাঁড়াতে পারে।

প্রায় আনুষ্ঠানিক ভূমিকার প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ার ২৭ বছর পর প্রথম কোনো জার্মান প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন।

২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের সময় তিনি ছিলেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

স্টাইনমায়ার ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচক হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডন ও ইউরোপীয় রাজধানীগুলোর উষ্ণ সম্পর্ককে তিনি ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন।

দিনের শুরুতে পার্লামেন্ট থেকে ইস্ট লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের শাখা পর্যন্ত বিভিন্ন কূটনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। 

সেখানে তিনি বলেন, এ প্রচেষ্টা চলমান থাকা জরুরি।

পার্লামেন্টের রয়্যাল গ্যালারিতে তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের পর মানুষ হতাশ হয়েছিল। অনেকেই সিদ্ধান্তটা বুঝতে পারেননি। কিন্তু দুই পক্ষই সেই অনুভূতিতে আবদ্ধ না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ডোন্ট লুক ব্যাক ইন অ্যাঙ্গার’— ওয়েসিসের বিখ্যাত সেই গানের মতোই আমরা পিছনে ফিরে রাগতে চাই না।

স্টাইনমায়ার বলেন, এ বছর ১৬ বছর পর লিয়াম ও নোয়েল গ্যালাগারের পুনর্মিলন ও ওয়েসিসের সোল্ড-আউট ট্যুর যেন গত দশকের সবচেয়ে বড় পপ ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কুল ব্রিটানিয়া এখনও জীবন্ত। আমাদের সম্পর্ক বদলেছে ঠিকই, কিন্তু প্রিয় ব্রিটিশরা, আমাদের আন্তরিকতা আছে আগের মতোই। তাই অতীতে নয়, আমাদের একসঙ্গে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে।’

‘কুল ব্রিটানিয়া’ হচ্ছে, ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগ পর্যন্ত একটি সময়কাল। যখন ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক গর্বের নতুন উত্থান ঘটে এবং যুক্তরাজ্যকে আধুনিক ও ইতিবাচক ভাবমূর্তিতে উপস্থাপন করা হয়।

জুলাইয়ে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত কেনসিংটন চুক্তির প্রশংসা করেন তিনি। 

এই চুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এ ছাড়া মে মাসে ব্রেক্সিটের পর প্রথম ইইউ-ইউকে শীর্ষ বৈঠকও হয়।

এই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানো।

স্টাইনমায়ার জানান, ২০২৮ সালে চালু হওয়ার কথা জার্মানি-ব্রিটেন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পের পাশাপাশি শিক্ষার্থী বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা দূর করতে যুব মোবিলিটি চুক্তির পরিকল্পনাও চলছে।

রাশিয়ার ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর ইউরোপ যুক্তরাজ্য সম্পর্ক নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ইউরোপ মহাদেশে এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ।

এর আগে, ২০২৩ সালের মার্চে ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয়ের জার্মানি সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতার নতুন মাত্রা পায়। 

বুধবার উইন্ডসর ক্যাসেলে চার্লসের দেওয়া নৈশভোজেও দুই দেশের গভীর সম্পর্কের কথা উঠে আসে।

স্টাইনমায়ারের সফর শুক্রবার কোভেন্ট্রিতে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে ব্রিটিশ ও জার্মান বিমানবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে এক স্মরণসভায় অংশ নেবেন। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহরটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল।