শিরোনাম

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রায় হাঁটু সমান কাদা মাটি পেরিয়ে অনেক কষ্টে নিজ বাড়িতে আসলেন রোসমিনা। প্রাণঘাতী বন্যায় গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়া শুরু হলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
আকস্মিক বন্যায় তৎক্ষণাৎ বাড়ি ছাড়ার সময় তিনি তেমন কিছুই সঙ্গে নিতে পারেননি। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ফিরে এসে দেখেন তার ঘরবাড়ি আর আগের মতো নেই। বহু দিনের সাজানো গুছানো আসবাবপত্র বন্যা শেষ করে দিয়েছে।
অনেক ইন্দোনেশীয় নাগরিকের মতো একক নাম ব্যবহারকারী এই নারীর জীবনে বন্যা এভাবেই ধ্বংসাত্মক ও বেদনার ছাপ রেখে গেল।
তাপানুলি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত এবং একটি বিরল ক্রান্তীয় ঝড়ের কারণে পাঁচ শতাধিক মাষের প্রাণহানি হয়েছে এবং আরো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। বৃষ্টিপাত এখানো অব্যাহত রয়েছে। তবে বন্যার পানি অনেকটা কমে গেছে।
তাপানুলিতে বাড়ির বাইরে রোসমিনা এএফপিকে বলেন, বাগান থেকে কেউ একজন দৌঁড়ে এসে জানায়, দৌঁড়াও, দৌঁড়াও, বানের জল আসছে।
তিনি বলেন, সন্তানকে বাঁচাতে আামি তৎক্ষণাৎ দৌঁড়ে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজি। পানি ইতোমধ্যেই হাঁটু পর্যন্ত উঠে যায়।
রোসমিনা জানান, তার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার তাদের সাহায্য করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো সোমবার এই অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি এখনও জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেননি অথবা বন্যা কবলিত শ্রীলঙ্কার মতো আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানাননি।
সুমাত্রার কিছু এলাকা এখনও দুর্গম অবস্থায় রয়েছে এবং সরকার ত্রাণ সহায়তা দিতে সামরিক জাহাজ ও হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের বেশিরভাগ অংশে বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে। এ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বাভাবিকভাবে ভারী বর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি বিরল ক্রান্তীয় ঝড় পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে।
পূর্ব আচেহ-তে ৩৩ বছর বয়সী জামজামি বলেন, বন্যার পানি সুনামির ঢেউয়ের মতো অপ্রতিরোধ্য ছিল। পানি কতটা বিশাল মনে হয়েছিল তা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারব না। তবে এটি সত্যিই মাত্রাতিরিক্ত ছিল।
তার গ্রামের লোকেরা বন্যা থেকে বাঁচতে স্থানীয় দোতলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল । তারা বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন তারা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন।
জামজামি বলেন, ‘আমাদের জন্য পরিষ্কার পানি পাওয়া দুষ্কর। কিছু শিশু জ্বরে ভূগতে শুরু করেছে এবং কোনো ওষুধ নেই।
পশ্চিম সুমাত্রার পাদাং-এর একটি স্কুলে কয়েকশ ব্যক্তির সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন জুমাদিলাহ। তিনি বলেন, দুর্যোগটি তার মতো কৃষক বা ব্যবসায়ী ও সাধারণ শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যাদের পুনরায় শুরু করার জন্য কোনো সঞ্চয় নেই।
জুমাদিলাহ বলেন, আমরা দিনে এনে দিনে খাই। এমন নয় যে আমরা সঞ্চয় করতে চাই না, কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে। আমরা কেবল দিনের পর দিন কাজ করতে পারি।
দুর্যোগের সময় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এবং সরকার অনুমান করেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।