শিরোনাম

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা সোমবার এক হাজার ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া বেঁচে যাওয়া মানুষদের সহায়তায় সেনা সদস্য মোতায়েন করেছে।
পাদাং থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
পৃথক আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার পুরো দ্বীপজুড়ে এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, দক্ষিণ থাইল্যান্ড ও উত্তর মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় টানা ভারী বর্ষণ হয়।
এ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুম চলছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও তীব্র বৃষ্টিপাত ও শক্তিশালী ঝড় দেখা দিচ্ছে।
অবিরাম বৃষ্টিতে অনেক মানুষ ছাদে আশ্রয় নিয়ে নৌকা বা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধারের অপেক্ষায় ছিলেন। পুরো গ্রামের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আজ সোমবার উত্তর সুমাত্রায় পৌঁছে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ানতো বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ সময়টা হয়ত কেটে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের এখন অগ্রাধিকার হলো কীভাবে দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা পাঠানো যায়, বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকাগুলোতে।
দেশটিতে বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৫০২ জন মারা গেছে এবং আরো ৫০০ জন নিখোঁজ থাকার কারণে প্রাবোওর ওপর জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার চাপ বাড়ছে। তবে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের মতো তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানাননি প্রবোও।
ইন্দোনেশিয়ায় এটি সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ২০১৮ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর, যেখানে সুলাওয়েসিতে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।
শ্রীলঙ্কায় সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’য় সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে।
শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা আজ সোমবার জানিয়েছেন, অন্তত ৩৫৫ জন মারা গেছে এবং আরও ৩৬৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। রাজধানী কলম্বোয় বন্যার পানি রাতভর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় এখন আশা করা হচ্ছে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। কিছু দোকান ও অফিস ইতোমধ্যে খুলে গেছে।
৩৭ বছর বয়সি ডেলিভারি ড্রাইভার দিনুশা সঞ্জয়া এএফপিকে বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা ছোটোখাটো বন্যার মুখোমুখি হই, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। শুধু পানির পরিমাণ নয়, কত দ্রুত সবকিছু ডুবে গেল সেটাই ভয়াবহ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যাঞ্চলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখন প্রকাশ পাচ্ছে, কারণ ত্রাণকর্মীরা গাছপালা ও ভূমিধসে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক পরিষ্কার করছেন।
প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং এ বন্যাকে তাদের ইতিহাসের বৃহত্তম ও সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গতকাল রোববার বিকেল নাগাদ শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টি কমলেও রাজধানীর নিম্নাঞ্চল এখনো জলামগ্ন রয়েছে। বড় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার এবং খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে। তবে, একটি হেলিকপ্টার কলম্বোর উত্তরে ক্র্যাশ করেছে এবং এতে পাইলট মারা গেছেন।
ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যে বন্যা হয়েছে, বিরল ট্রপিক্যাল স্টর্মের কারণে ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়িয়েছে।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডে অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকার সহায়তা কার্যক্রম চালু করেছে। তবে, বন্যা মোকাবিলায় অদক্ষতার অভিযোগে দেশটির সরকারের সমালোচনা বাড়ছে।
মালয়েশিয়ার পারলিস রাজ্যের অনেক এলাকা ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে এবং সেখানে দু’জন মারা গেছে।