শিরোনাম

ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনী নতুন করে হামলা চালিয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্য যুদ্ধবিরতির ঠিক এক বছর পর এই হামলা চালানো হলো।
জেরুজালেম থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছেন।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান ‘লিতানি নদীর উত্তরে আল-মাহমুদিয়া ও আল-জারমাকে’ ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েছে।
দুই পক্ষের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা শত্রুতার অবসান ঘটাতে, ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু ইসরাইল যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও বারবার লেবাননে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে।
তারা হিজবুল্লাহ সদস্যদের ও তাদের অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে এই হামলা অব্যহত রেখেছে।
হিজবুল্লাহকে অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার যুক্তি দেখিয়ে এ সব হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সৈন্যরা।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেছেন, তার দেশ ‘ক্রমবর্ধমান একতরফা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে।’
বৃহস্পতিবারের হামলার পর এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তারা ‘দক্ষিণ লেবাননের বেশ কয়েকটি এলাকায় হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে আঘাত করেছে ও ধ্বংস করে দিয়েছে।’
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলেছে, তারা ‘হিজবুল্লাহর অস্ত্র মজুদ করা বেশ কয়েকটি লঞ্চ সাইট’, ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী দ্বারা ব্যবহৃত ‘সামরিক পোস্ট’ ও অস্ত্র ধারণকারী একটি গুদামে আঘাত করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী ‘ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্য যেকোনো হুমকি দূর করার জন্য’ কাজ চালিয়ে যাবে।
ইসরাইল বলেছে যে যুদ্ধবিরতির পর থেকে, তারা হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ভেঙে, তার গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যর্থ করে ও তার সামরিক সক্ষমতা হ্রাস করে ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠীটিকে পুনর্নির্মাণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।
ইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে যুদ্ধবিরতির সময় তারা প্রায় ১ হাজার ২০০টি হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর ৩৭০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসীকে নির্মূল করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে লিটানি নদীর উত্তরে তার বাহিনী প্রত্যাহার করতে হয়েছিল এবং সেখানকার সামরিক অবকাঠামো ভেঙে ফেলতে হয়েছিল।
সরকার-অনুমোদিত পরিকল্পনার অধীনে, লেবাননের সেনাবাহিনী বছরের শেষ নাগাদ নদীর দক্ষিণে হিজবুল্লাহর সামরিক অবকাঠামো ভেঙে ফেলবে, তারপর দেশের অন্যান্য এলাকাগুলোতে অভিযান চালাবে।
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য লেবানন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা দলটিকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, লেবাননের সেনাবাহিনী ‘সশস্ত্র প্রদর্শন রোধ করছে, গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করছে, টানেল পরিদর্শন করছে।
বৃহস্পতিবার, আউন লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী জিনাইন হেনিস-প্লাসচার্টের সঙ্গে দেখা করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির এক বছর পরেও ‘অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।’
-অস্ত্র পাওয়া গেছে -
দক্ষিণ লেবাননে শান্তিরক্ষী কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এলাকাটিতে ‘অবৈধ অস্ত্র’ শনাক্ত ও উদ্ধার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউনিফিল অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে এবং জাতিসংঘের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের অন্তবর্তীকালীন বাহিনী ইউএনআইএফআইএল জানিয়েছে, গত এক বছরে তারা যুদ্ধবিরতির ১০ হাজারেরও বেশি আকাশ ও স্থল লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি আরো বলেছে, এ সব লঙ্ঘন সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এই সপ্তাহের শুরুতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে, লেবাননে ‘কোনও শান্তি’ থাকবে না।
রোববার বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ইসরাইলি হামলায় হাইথাম আলী তাবাতাবাই নিহত হন।
তাবাতাবাই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইল কর্তৃক নিহত সবচেয়ে সিনিয়র হিজবুল্লাহ কমান্ডার।