শিরোনাম

ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মধ্য নাইজেরিয়ার একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে বন্দুকধারীরা ২২৭ জন ছাত্রী ও শিক্ষককে অপহরণ করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি স্কুল শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় অপহরণের ঘটনা।
দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন।
নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের একজন মুখপাত্র জানান, নাইজার রাজ্যের সেন্ট মেরি স্কুল থেকে অপহৃত ২১৫ জন শিক্ষার্থীর সবাই নারী এবং এ সময় আরও ১২ জন শিক্ষককেও অপহরণ করা হয়েছে।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশে নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে, পার্শ্ববর্তী কাটসিনা ও প্লাটেও রাজ্যের কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
নাইজার রাজ্য সরকার অনেক স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে।
সোমবার উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার কেব্বি রাজ্যের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্দুকধারীদের হামলার পর ২৫ জন ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনায় সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট বোলা টিউবু জোহানেসবার্গে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানসহ আন্তর্জাতিক কর্মসূচি বাতিল করেছেন।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের হত্যার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর থেকে দেশটির পশ্চিমে দুটি অপহরণ অভিযান এবং একটি গির্জায় হামলা চালানো হয়। ওই হামলার ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছে।
বোর্নো রাজ্যের চিবোকে বোকো হারাম জিহাদিদের দ্বারা প্রায় ৩০০ নারীকে অপহরণের ঘটনায় নাইজেরিয়া এখনও স্তব্ধ হয়ে আছে। এই অপহৃত নারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কয়েক বছর ধরে আটক ছিল।
সেন্ট মেরি স্কুলটি নাইজার রাজ্যের আগওয়ারা এলাকার পাপিরিতে অবস্থিত।
এলাকার ক্যাথলিক চার্চ এক বিবৃতিতে বলেছে, রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে ‘সশস্ত্র হামলাকারীরা স্কুলে হামলা’ করে এবং ছাত্র, শিক্ষক ও একজন নিরাপত্তারক্ষীকে আহত অবস্থায় অপহরণ করে। ওই নিরাপত্তা কর্মীকে গুলি করা হয়।
খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন অফ নাইজেরিয়া বিবৃতিতে বলেছে যে, ‘কিছু ছাত্র পালিয়ে গেছে এবং এই ঘটনায় আতঙ্কিত অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিতে আসতে শুরু করেছেন। কারণ, স্কুলটি বন্ধ করে দিতে হবে।’
খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে অপহৃতের সংখ্যা ২২৭ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরেই ভারী অস্ত্রধারী অপরাধী দলগুলো উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য নাইজেরিয়ার গ্রামীণ এলাকায় আক্রমণ জোরদার করে চলেছে। সেখানে তারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে।
গ্রামীণ এই এলাকাগুলোতে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি খুবই কম।
জামফারা, কাটসিনা, কাদুনা, সোকোটো, কেব্বি ও নাইজারসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিস্তৃত একটি বিশাল বনে এই দলগুলোর শিবির রয়েছে, যেখান থেকে তারা হামলা চালায়।
জাতিসংঘের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে যে সেন্ট মেরি’স থেকে অপহৃত শিশুদের সম্ভবত নিকটবর্তী কাদুনা রাজ্যের বিরনিন গোয়ারি বনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে, কেব্বির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ‘ক্রমবর্ধমান হুমকির মাত্রা’ সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর, এই রাজ্যের কিছু অংশে সমস্ত বোর্ডিং স্কুল সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ অমান্য করার জন্য নাইজার রাজ্য সরকার ক্যাথলিক স্কুলকে অভিযুক্ত করেছে।
নাইজার রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কৌশলগত ইউনিট ও সামরিক বাহিনী অপহৃত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সন্ধান করছে। এতে বলা হয়েছে যে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ‘অপহৃত ছাত্রদের উদ্ধারের লক্ষ্যে বনাঞ্চলে তল্লাশি চালাচ্ছে’।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডন্ট নিরাপত্তা বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন এবং কেব্বি স্কুলের মেয়েদের অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলহাজি বেলো মাতাওয়ালেকে পাঠিয়েছেন।
২০২১ সালে উত্তর-পশ্চিম জামফারা রাজ্যের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অপহৃত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৭৯ জন শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় এই মন্ত্রীর ‘দস্যুতা ও গণ-অপহরণ মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা’ রয়েছে বলে তার অফিস জানিয়েছে।
মঙ্গলবার পশ্চিম নাইজেরিয়ার একটি গির্জায় অনলাইনে সম্প্রচারিত একটি প্রার্থনার সময় পৃথক হামলায়, বন্দুকধারীরা দুই জনকে হত্যা করে। এ সময় আরো বেশ কয়েকজন প্রার্থনাকরীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাইজেরিয়া বিভিন্ন ফ্রন্টে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ায়, দেশব্যাপী জিম্মির ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও জিহাদিদের একটি পছন্দের কৌশল হয়ে উঠেছে।
জিহাদিরা ১৬ বছর ধরে খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে।
২০১৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তর-পূর্বে জিহাদি সহিংসতায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।