শিরোনাম

ঢাকা, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নাইজেরিয়ার বাহিনী মঙ্গলবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২৫ জন স্কুলছাত্রীকে অপহরণকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের খোঁজে অভিযান চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারীদের মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
লাগোস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বোকো হারামের ২৭৬ জন ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনা এক দশকেরও বেশি সময় পরে, সোমবার ভোরে কেব্বি রাজ্যের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হামলাটি ছিল মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে স্কুলছাত্রীদের সর্বশেষ অপহরণের ঘটনা।
বোকো হারামের ছাত্রীদের অপহরণ করার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
নাইজেরিয়ার খ্রিস্টানদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগে ট্রাম্পের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকির পর, এই অপহরণের ঘটনা নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এদিকে, সম্প্রতি সেনাপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া মেজর জেনারেল ওয়াইদি শাইবু কেব্বি রাজ্যে মোতায়েন সেনাদের বলেছেন, ‘তোমাদের অবশ্যই দিনরাত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের অবশ্যই এই শিশুদের খুঁজে বের করতে হবে।’
অপহরণকারীরা মাগা শহরের সরকারি বালিকা সমন্বিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেড়া টপকে উপাধ্যক্ষকে হত্যা করার পর, এই সব শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে।
প্রতিবেশী নাইজারের জিহাদি হুমকি ও আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশটির উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের অপহরণ ও হত্যার সময় গ্রাম লুটপাটকারী অপরাধী চক্রের মধ্যে আটকা পড়েছে কেব্বি ।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু মঙ্গলবার অপহরণের নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করার জন্য স্থানীয় জনগণকে তথ্য আদান প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি স্কুলছাত্রীদের অপহরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
অপরাধীরা এ ধরনের হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনা ঘটল।
- মার্কিন উত্তেজনা -
কেব্বি রাজ্য পুলিশ মঙ্গলবার এএফপিকে জানিয়েছে যে অপহৃত স্কুলছাত্রীরা সবাই মুসলিম ছিল।
কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য রিলি মুর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ তার অনুসারীদের ২৫ জন মেয়ের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্পের খ্রিস্টান নির্যাতনের দাবিরই পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
মুর লিখেছেন, ‘এই ভয়াবহ হামলার সমস্ত বিবরণ আমাদের কাছে না থাকলেও, আমরা জানি যে নাইজেরিয়ার উত্তর একটি খ্রিস্টান ছিটমহলে এই হামলা হয়েছে।’
উগ্র ইসলামপন্থীরা বিপূল সংখ্যক খ্রিস্টান হত্যার করেছে উল্লেখ করে নভেম্বরের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, তিনি পেন্টাগনকে নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছেন।
তবে নাইজেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে দাবি প্রত্যাখ্যান করে জোর দিয়ে বলেছে যে দেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংকটের কারণে অনেক মুসলিম নিহত হয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ তুগার সোমবার এএফপিকে বলেন, নাইজেরিয়া নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে।
ওয়াশিংটন সামরিক হামলার নির্দেশ দেবে বলে তিনি আশংকা করছেন না।
নাইজেরিয়া অসংখ্য সংঘাতের কেন্দ্রস্থল। সেখানে প্রায়শই নির্বিচারে খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয়ই জিহাদি বিদ্রোহের শিকার হয়।
মঙ্গলবার টিনুবু নিশ্চিত করেছেন যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লেক চাদ অঞ্চলে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রধান ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল মুসা উবা শুক্রবার জিহাদিদের হাতে নিহত হয়েছেন।
২০২১ সালের পর থেকে দেশটির দীর্ঘস্থায়ী জিহাদি যুদ্ধে নিহত সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা তিনি।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপের পশ্চিম আফ্রিকান শাখা আইএসডব্লিউএপি এই অতর্কিত হামলার দায় স্বীকার করেছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আরো দুই সৈন্য ও দুই মিলিশিয়া সদস্যও ওই হামলায় নিহত হয়।
- ‘আমাকে বাইরে টেনে নিয়ে গেছে’ -
স্কুলের নিহত উপাধ্যক্ষ হাসান মাকুকুর স্ত্রী আমিনা হাসান নাইজেরিয়ান টেলিভিশনকে জানান, বন্দুকধারীরা ভেতরে প্রবেশের আগে স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৩০ মিনিটে তাদের বাড়ির বাইরে তাদের আওয়াজ শুনে, তিনি তার স্বামীকে জাগানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই শুরু করি এবং তাদের একজন তার বন্দুক বের করে আমার স্বামীকে গুলি করে। তারপর সে আমার হাত ধরে বাড়ির বাইরে টেনে নিয়ে যায়।’
আমিনা হাসান বলেণ, ‘আমি তখনও তাদের সঙ্গে তর্ক করছিলাম। সেই সময়ে আমার মেয়ে বেরিয়ে আসে।
তারপর তারা আমাকে ছেড়ে তার কাছে যায় এবং তাকে অপহরণ করে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়।’
তবে হামলাকারীদের অসতর্ক মুহূর্তে তার মেয়ে ঝোপের মধ্যে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
২০২১ সালের জুনে একটি সরকারি কলেজ থেকে অপহরণকারীরা ১০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
বাবা-মা মুক্তিপণ আদায়ের পর দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই ছাত্রীদের দলে দলে ছেড়ে দেওয়া হয়।