শিরোনাম

ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মেনোপজের উপসর্গ কমাতে ব্যবহৃত অনেক হরমোন থেরাপির ওপর থাকা কঠোর নিরাপত্তা সতর্কতাগুলো সরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব থেরাপির ঝুঁকিগুলো এতদিন অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এক ঘোষণায় এ কথা বলেছে। খবর এএফপি’র।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) মেনোপজকালে শরীরে কমে যাওয়া এস্ট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে। এর মাধ্যমে হট ফ্ল্যাশ, রাতের ঘাম, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং হাড়ের জয়েন্টে ব্যথার মতো উপসর্গ কমানো যায়।
হট ফ্ল্যাশ মেনোপজের খুব সাধারণ একটি উপসর্গ। হঠাৎ করে শরীর খুব গরম লাগা, মুখ ও গলা লাল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড ঘাম হওয়ার মতো পুরো অভিজ্ঞতাকেই হট ফ্ল্যাশ বলা হয়।
এক সময় এইচআরটি নিয়মিত ব্যবহৃত হত। কিন্তু ২০০০-এর দশকে একটি বড় গবেষণায় ঝুঁকির ইঙ্গিত দেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহার কমে যায়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ ‘ব্ল্যাক বক্স’ নামে কঠোর সতর্কতা জারি করে। এতে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির কথাও বলা হয়েছিল।
সমালোচকদের দাবি, ওই গবেষণা বিভ্রান্তিকর ছিল। কারণ পরীক্ষা করা হয় মূলত ৬০ বছর বয়সী নারীদের ওপর, যারা মেনোপজের প্রায় এক দশক পার করেছেন। এ বয়সে স্বাভাবিকভাবেই হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বর্তমান নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, ৪০ কিংবা ৫০ বছর বয়সী সুস্থ নব্যমেনোপজ বা পেরিমেনোপজাল নারীরা এইচআরটি নিতে পারেন। এছাড়া নতুন প্রজন্মের কম ডোজ বা স্থানীয়ভাবে প্রয়োগযোগ্য এইচআরটিও এখন পাওয়া যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য প্রধান রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র বলেছেন, ‘আমরা পুরনো ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছি এবং প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসায় পুনরায় মনোযোগ দিচ্ছি। এটি নারীদের সীমাবদ্ধ না করে সক্ষম করে তুলবে।’
অনেক বিশেষজ্ঞ দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাক বক্স সতর্কতাটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে, এই সতর্কতাটি অনেক সময় নারীদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও চিকিৎসার সুফল ঝুঁকির চেয়ে বেশি।
কেউ কেউ বলছেন, পরিবর্তন আনার আগে কঠোর পর্যালোচনা প্রক্রিয়া থাকা উচিত।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ রিসার্স-এর সভাপতি ডায়ানা জুকারম্যান বলেন, ‘ব্ল্যাক বক্স সতর্কতা অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এখন এটি হালনাগাদের সময় হয়েছে।’
তবে তিনি সতর্ক করেন, ঝুঁকি একেবারেই নেই তা নয়; এইচআরটির সুবিধা মূলত হট ফ্ল্যাশ ও মেনোপজজনিত উপসর্গ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটির প্রয়োজনের ধারণা উড়িয়ে দিয়ে এফডিএ প্রধান মার্টি মাকারী বলেছেন, এগুলো ‘অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক, দীর্ঘ, বিতর্কিত ও ব্যয়বহুল’ হয়।
গ্রীষ্মে তিনি এইচআরটির সমর্থনকারী একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করেন। তারা ফার্মাসিউটিক্যাল লবিংয়ের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক আড্রিয়ান ফঘ-বারম্যান কর্তৃপক্ষের ঘোষণাকে ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করে বলেন, সিদ্ধান্তটি প্রয়োজনীয় পর্যালোচনার আগেই নেওয়া হয়েছে। যে কোন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া এভাবে হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, কিছু নারীর জন্য এইচআরটি উপকারি হতে পারে, তবে প্রকৃত ঝুঁকি এখনও রয়েছে এবং আরও গবেষণা দরকার।
অন্যদিকে, আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস-এর (এসিওজি) সভাপতি স্টিভেন ফ্লেইশম্যান এফডিএ-এর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নতুন পদক্ষেপ রোগী ও চিকিৎসকদের যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করবে। তার মতে, মৌখিক বা প্যাচের মাধ্যমে নেওয়া সিস্টেমিক এস্ট্রোজেন এবং কম ডোজ ভ্যাজাইনাল এস্ট্রোজেনের মধ্যে পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
স্টিভেন ফ্লেইশম্যান আরও বলেন, অন্যান্য ওষুধের মত সিস্টেমিক ইস্ট্রোজেন পণ্যগুলোও ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই কার জন্য এটি উপযোগী হবে, তা রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা উচিত।
এফডিএ জানিয়েছে, কেবলমাত্র ইস্ট্রোজেন দিয়ে তৈরি সিস্টেমিক ইস্ট্রোজেন, সেগুলোতে জরায়ু ক্যানসারের (এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার) বিশেষ সতর্কতা দেওয়া থাকে। এখনই সেই সতর্কতা তুলে নেওয়া হবে না।
নার্স-মিডওয়াইফ এবং মেনোপজ সোসাইটি-সার্টিফায়েড প্র্যাকটিশনার সারা শিয়ালি এএফপিকে জানান, তিনি আশা করেন এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ ও সচেতনতার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বদলানো শুরু করবে।
শিলি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক সমাজের বড় একটি অংশ এখনও হরমোন থেরাপি নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান বা আত্মবিশ্বাস রাখে না। আর এর ফলে অনেক নারী বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’