শিরোনাম

ঢাকা, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারার যুক্তরাষ্ট্র সফরকে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে এক নতুন মোড় হিসেবে দেখছেন দামেস্কের নাগরিকরা। মঙ্গলবার তারা আশা প্রকাশ করেন, এ সফর যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথ খুলে দেবে।
দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা’কে স্বাগত জানান। ১৯৪৬ সালে স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেছেন। একসময় এই সাবেক জিহাদিকে গ্রেফতারের জন্য ওয়াশিংটন ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ফলে শারা’র জন্য এই সফর এক বিরাট অর্জন।
আইন শিক্ষার্থী বুশরা আবদেল বারি বলেন, ‘ বছরের পর বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর এই সফর সিরিয়ার জন্য এক নতুন সূচনা যা বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হওয়ার দরজা খুলে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সফরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে সিরিয়ার পুনর্গঠন সহজ হবে।’
শারা’র ঐতিহাসিক সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, ‘সিজার অ্যাক্ট’-এর আওতায় সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে, কংগ্রেস স্থায়ীভাবে তা তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
আসাদ সরকারের অধীনে সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই আইনটি সিরিয়ায় বিনিয়োগে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে, দেশটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে চলে যায়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল সিরিয়া। ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের প্রধান সমর্থক ছিল মস্কো।
তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট শারা পশ্চিমা বিশ্ব ও উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করার কৌশলও নিচ্ছেন।
৩৬ বছর বয়সী ছাপাখানা কর্মী ওমর নাসার বলেন, ‘এই সফরের পর আমরা খুবই আশাবাদী। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব আশা করছি।’
‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের’ আশা
দামেস্কের এক কফি দোকানি সাদ্দাম হাজ্জার মনে করেন, ‘পরিস্থিতি এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের অংশ হতে চাই। এত আত্মত্যাগের পর সিরীয় জনগণ একটি ভালো জীবন প্রত্যাশা করে।’
সিরিয়ায় ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ ১৩ বছর পর আসাদের পতনের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ সিরীয় দেশ ছেড়েছেন। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে।
২৫ বছর বয়সী এনজিওকর্মী লায়াল কাদ্দুর মনে করেন, ওয়াশিংটন সফর ছিল ‘এক সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ’, যা দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতা ভেঙে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এর সম্ভাব্য ফল হতে পারে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়া এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন।’
তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দেশ কি এখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে, যা স্বাধীন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে?”—ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের ইঙ্গিত দেন তিনি।
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমাদের দেশ কি এখন ‘আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হবে, যা স্বাধীন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।’
তিনি ইঙ্গিত করেন, দীর্ঘদিনের শত্রু ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আসতে পারে।